শনিবার ০৪ মে ২০২৪ বৈশাখ ২০ ১৪৩১ ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৩
নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের ঝিগড়া (পদ্মপুকুর) গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী) নারী চম্পা পাহান। গত কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা গেলে তিন সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ছেলেদের নিয়ে একটি বেড়ার ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করতে হয়েছিল। ঝড়বৃষ্টি হলে টিনের যেখানে ফুটো দিয়ে পানি পড়ত। ফুটোর নিচে হাড়িপাতিল দিয়ে রাখতে হতো। দুশ্চিন্তায় রাত পাড়ি দিতে হতো।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় চম্পাকে জমিসহ মুজির বর্ষের একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। জমিসহ বাড়ি পেয়ে চম্পার জীবনমানের পরির্বতন হয়েছে। বাড়ির পিছনে ছোট্র একটি শেড নির্মান করে তাতে গরুর পালন করছে। এখন্ তাকে আর অন্যের জমিতে কাজের জন্য যেতে হয়না।
এমন গল্প শুধু চম্পার একার নয়। তার মত এ জেলার অনেরেই প্রধানমন্ত্রী উপহার বাড়ি পেয়ে ঘুরে দাড়িয়ে পেশা পাল্টিয়েছে। অন্যের জমিতে আর কাজে না গিয়ে হাঁস, মুরগি, গরু ও ছাগল পালনের পাশাপাশি বাড়ির পিছনে চাষ করছে শাক-সবজি। অনেকে পালন করছে কবুতর। বাড়ি পাওয়ার পর দু’বেলা দুমুঠো খেয়ে শান্তিতে নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারছে। বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি অনেকে কিনেছে টিভি-ফ্রিজ। প্রত্যান্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা (আদিবাসী) আধাপাকা ইটের বাড়ি পেয়ে আনন্দে অশ্রুসিক্ত। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করতে পারছে। আর এ বাড়িগুলো পাওয়া ছিলো যেন তাদের আলাদিনের চেরাগের মতো। যা ছিল কল্পনাতিত। নিশ্চিতে তারা এখন সেই বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে সমতলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীরনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় ১১ উপজেলায় বিগত তিন অর্থ-বছরে ৮৫৯টি আদিবাসী পরিবারকে সেমিপাকা ইটের বাড়ি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে ৮২৫ জনকে বাইসাইকেল এবং ৪ হাজার ২শত ৪ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তিসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
চম্পা পাহান বলেন, বদলগাছী উপজেলা সদরের কলেজপাড়া আমার বিয়ে হয়েছিল। স্বামী আটোচার্জার চালাত। হঠাৎ করে সড়ক দূর্ঘটনায় স্বামী মারা গেলে ৩ ছেলেকে নিয়ে চরম বিপাকে পরি। এক পর্যায়ে সদর উপজেলার পদ্মপুকুর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। একটা ঘরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনেক কষ্টে থাকতে হত। প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই ঘর সেই দুঃসহজীবন থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন আমি বাড়ি পিছনে ছোট্র একটি শেড নির্মান করে গরু পালন করছি। অনেক ভাল আছি। প্রধানমন্ত্রীর জন্য মন থেকে দোয়া করি সে যেন সুস্থ থাকে। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকে।
পদ্মপুকুর আশ্রয়ন প্রকল্পের আর এক বাসিন্দা সুদেব পাহান বলেন, আগে বেড়াঁর বাড়িতে ছিলাম। অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করতাম। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ি দিয়েছে। বাড়ির পিছনে সবজি আবাঁদ করছি। আর কবুতরের প্রতি আমার ছোট বেলা হতেই নেশা তাই কবুতর পালন করছি। গরু কেনার প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন আর অন্যের জমিতে কাজে যেতে হয়না।
[৭] জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এর উপদেষ্টা এ্যাড. শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন বলেন, প্রতিটি মানুষের বড় স্বপ্ন নিজের একটি বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সেই স্বপ পুরুন করেছে। বাড়ির চিন্তামুক্ত হওয়ায় তারা এখন ঘুরে দাড়াচ্ছে। এটি এই সরকারের একটি মহতি উদ্যোগ।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম রবিন শীষ বলেন, এনজিও সমন্বয় মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেসকল ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর মানুষরা ঘর পেয়েছে তাদের যেন সহজ শর্তে ঋন দেওয়া হয়। এছাড়া যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সহ সকল ধরনের প্রশিক্ষনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের নাম দেন দেওয়া হয়। সকল ধরনের কৃষি প্রণোদনায় তাদের দেওয়া হচ্ছে। এক কথায় তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি আমরাও প্রশাসনের পক্ষ হতে সর্বাত্নক চেস্টা করে যাচ্ছি।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা যে পেশার জন্য স্বাচ্ছন্দবোধ করে সেই মোতাবেক তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া স্বল্প সুদে অথবা সুদ বিহীন ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের যেসব ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে বাইসাইকেল ও বৃত্তিসহ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। আশা করি দেশের উন্নয়নের তারাও অবদান রাখতে পারবে।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়