শনিবার ১৮ মে ২০২৪ জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১ ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৩
বাবুই পাখির ডাকে বলছে চড়ুই, কুড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই। মানুষকে মানবিক দিক থেকে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী কবিতাটি আজও মানুষের মুখে মুখে।
বাবুই পাখিকে ঘিরে লেখা কবির ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতাটি আজও উদাহারণ হিসাবে মানুষ ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে সেই বাবুই পাখি। বাবুই পাখির বাসা আজ স্মৃতির অন্তরালের পথে। তাইতো শোনা যায়না বাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দ।
অথচ এখন থেকে ২৫বছর পূর্বেও নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলাসহ সকল গ্রাম-গঞ্জের তালগাছে ব্যাপক বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিলনা। মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করতো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাবুই হচ্ছে চড়ুই সাদৃশ্য পাখি। গাছে ঝুরিরমত চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎ জুড়ে। এ জন্য অনেকেই একে তাঁতি পাখিও বলে থাকেন। সারা বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা পায় ১১৭। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখি বসবাস করে বলে জানাগেছে। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় তাদের ঘর আলোকিত করার জন্য জোঁনাকি পোকা ধরে নিয়ে তাদের ঘরে রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির
গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ হয় তামাটে বর্ণের। নীচের দিকে কোন দাগ থাকে না। ঠোঁট পুরো মোছাকার, লেজ চৌকা। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামী। বুকের উপরের দিগ হয় ফ্যাকাশে। অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী বাবুই পাখির চাঁদি পিঠের পালকের মতোই বাদামি। বুকের কালো দোড়া ততটা স্পষ্ট নয়। প্রকট ভ্রুরেখা কানের পিছনে একটি ফোঁটা থাকে। বাবুই পাখি সাধারণত তালগাছেই বাসা বাধে। তবে বর্তমানে তাল গাছ কমে যাওযায় কিছু কিছু পাখি নিম গাছে বাসা বাধা শুরু করেছে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।
জানা যায়, পোরশা উপজেলায় একসময় প্রচুর তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছ ছিলো। এ সকল গাছে বাসা বেঁধে বাবুই পাখি বসবাস করত। ফুটে তুলত শৈল্পিক নিদর্শন। বাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দ আর তাদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করতো। বর্তমানে এ এলাকা থেকে ঐ জাতীয় গাছ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখিও।
তাছাড়া ধান, আমসহ অন্যান্য ক্ষেতে ব্যাপক ভাবে কীটনাশক ব্যবহার, বরই ও লিচু গাছে কারেন্ট জালের ব্যবহার ও সর্বোপরি পাখি শিকারীদের বেপরোয়া আচরণের কারণে এ এলাকাসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়