বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ বৈশাখ ১৯ ১৪৩১ ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৪
চৈত্র মাস। খাল-বিল, নদী নালা ও ডোবার পানি কমতে শুরু করেছে। এসব জলাশয়ে এখন স্বল্প পানি। ইরি-বোরো ধান আধা-পাকা অবস্থা। এসময় টাতে অনেকের হাতে তেমন একটা কাজ থাকে না। অবসর সময়ে সৌখির মাছ শিকারিরা দলবদ্ধ হয়ে পলো/হাউরি (চাপিজ¦ালা) নিয়ে জলাশয়গুলোতে মাছ শিকারের জন্য বের হন।
মাছ পাওয়া বা না পাওয়া কোন বড় কথা না। সবাই একসাথে মাছ শিকার করতে বের হওয়ায় আনন্দের ব্যাপার। এ অবসরে অল্প পানিতে মাছ শিকারের মহোৎসব মেতে উঠেছে সবাই।
নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদী। এ নদীর কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও বুক সমান। আবার কোথাও শুকিয়ে গেছে। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে ছোট যমুনা নদীর শীবপুর এলাকায় একদল সৌখিন শিকারী নদীতে নেমে মাছ শিকার করছে। মাথা ও কোমরে আটসাট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই প্রায় শতাধিক মানুষ সখের বসে মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নদীতে নেমেছে। যাদের অধিকাংশই যুবক। কেউ বা উদাম শরীরেও পানিতে নেমেছে। নেমেছেন মাছ ধরতে। পানিতে নেমে হৈ-হুল্লুর করে সবাই চাপিজ¦ালা দিয়ে মাছ শিকারে ব্যস্ত।
খাল-বিল, নদী-নালা ও ডোবাতে পানি কমে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দল বেধে মাছ ধরার দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দলবদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে আবার কোথায় পলো দিয়ে মাছ ধরা। দিনে রাতে সুতা-বড়শি দিয়ে নদী থেকে ধরা হচ্ছে বোয়াল মাছ। বড়শিতে খাদ্য গেথে ছুড়ে ফেলা হয় নদীর পানিতে। রাতে বাতি জেলে নদীর পাড়ে সুত বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। তবে সুতা-বড়শি দিয়ে মাছ ধরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
সকাল থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল পর্যন্ত। বিভিন্ন নদী ও জলাশয়গুলোতে দল বেধ সারি বদ্ধ হয়ে পানিতে ফেলা হয় চাপিজ¦ালা। যেখানে ফাঁদে পড়ে শোইল, টাকি ও বোয়াল। তবে কবে কোথায় মাছ ধরা হবে উপজেলার হাট ও বাজারে আগেই সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়। অনেকে আবার মোবাইল ফোনে জেনে নেন। গ্রাম থেকে ৮-১০ কিলোমিটার বা আরো দুরে পায়ে হেটে দলবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়েন মাছ শিকারে।
বদলগাছী উপজেলার কোলা গ্রামের শাহজাহান আলী বলেন- কোথায় পলো দিয়ে মাছ ধরা হবে তা আগেই গ্রামের হাটে সবাইকে বলে দেয়া হয়। এরপর সকালে সবাই হাউরি নিয়ে বেরিয়ে পরা হয়। বাপ-দাদার সময় থেকে আমরা প্রতি বছর পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব করে আসছি। কারো পলোতে মাছ ধরা পড়ে আবার কারো হয়না। মাছ পাওয়াটা বড় কথা নয়, বড় কথা সবাই আনন্দ করে একসাথে মাছ ধরতে বের হয়। এটাই আনন্দ। গ্রাম থেকে অন্তত ১৫ কিলোমিটার দুরে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীতে শতাধিক জন মাছ শিকার করতে আসা হয়েছে।
একই গ্রামের ৬৫ বছর বয়সি এমদাদুল হক বলেন- বয়স যখন ১৪-১৫ বছর তখন থেকে বাবার সাথে পলো/হাউরি (চাপিজ¦ালা) দিয়ে বিভিন্ন নদীতে মাছ ধরতে বেরিয়ে যেতাম। বদলগাছী ও নওগাঁ সদর উপজেলার নদীতে বেশি যাওয়া হয়। সে সময় নদীতে ৮-৯ কেজি ওজনের বোয়াল এবং ৫-৬ কেজি ওজনের আইড় মাছ পাওয়া যেতো। কিন্ত এখন আর আগের মতো সেই মাছ পাওয়া যায় না। নদীতে মাছ কমে গেছে বিভিন্ন কারণে। তারমধ্যে নদী শুকিয়ে যাওয়া অন্যতম।
কোলারপালসা গ্রামের আজিবর রহমান বলেন- দেড় কেজি ওজনের একটি আইড় মাছ পেয়েছি। এতেই অনেক খুশি। এখন আর আগের মতো বড় মাছ পাওয়া যায় না। তবুও এভাবে মাছ ধরতে আনন্দ লাগে।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়