সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৫ ১৪৩১ ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৮
সুদ ব্যবসায়ীদের চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে জেলা সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার অনেকে চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে বাড়ি-ঘড় ও পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও জানা গেছে। সুদের অতিরিক্ত টাকা আদায়ে অনেকের বিরুদ্ধেই চেকের মামলা করেছে সুদ ব্যবসায়ীরা। ফলে হয়রানির পাশাপাশি চড়া সুদ টানতে গিয়ে জায়গা-জমি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছে একের পর এক পরিবার।
জানা যায়, সুদ ব্যবসায়ী ও তাদের লোকজন অর্থ সংকটে থাকা বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিদের টাকা দেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও সুযোগ পেলে ফাঁকা ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। গ্রহীতাদের অভাব ও সরলতার সুযোগ নিয়ে টাকার পরিমাণ ও তারিখের স্থান ফাঁকা রেখে গ্রহিতার কাছ থেকে ব্যাংকের ফাঁকা চেক নিয়ে থাকে সুদ ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন জানান, বর্তমানে নয়া কৌশলে সুদ কারবারিরা তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা প্রশাসনের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নয়া কৌশল হিসেবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সমবায় নিবন্ধন নিয়ে সমবায় সমিতির সাইন বোর্ডের অন্তরালে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের কারবার। প্রতি ১০ হাজার টাকার বিপরীতে সপ্তাহে ১ হাজার টাকা সুদ নিচ্ছেন। এতে দেখা যায় মাত্র ১০ হাজার টাকা সুদের উপর বছরে ৫২ সপ্তাহে ৫২ হাজার টাকা সুদ আদায় করার পরও আসল ১০ হাজার টাকা পরিশোধ হয়না গ্রাহকের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চড়া সুদের টাকা দিতে না পেরে ৩ জন আত্মহত্যা ছাড়াও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন একজন বিধবা নারী। চৌমাশিয়া গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, আমার মেয়ের বিয়ে সময় সুদে নেয়া মাত্র ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে যেয়ে আমার বসবাসের ঘরের সামনের জায়গা (খলিয়ান) পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
একই গ্রামের এনামুল হক জানান, হঠাৎ করেই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি প্রথমে একজন সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা গ্রহন করি। কিন্তু আমি উপার্জনের সমস্ত অর্থ সুদ ব্যবসায়ীকে দিয়েও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছিলাম না। পরে আরেক সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে সুদের টাকা নিতে বাধ্য হই এবং সেই টাকা দেয়ার পরও প্রথম সুদ ব্যবসায়ী আরো টাকা দাবী করে। এভাবেই আমি সুদের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ে এক পর্যায়ে মাঠের একমাত্র সম্বল ১২ কাঠা আবাদী জমি বন্ধক রেখে সব টাকা সুদ ব্যবসায়ীদের দেয়ার পরও তারা আরো দেড়-দুই লাখ টাকা দাবি করলে তাদের চাপের মুখে এক সময় স্ত্রী-সন্তান রেখে পালিয়ে যাই। ঘটনাটি জানার পর আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বসে ফের নগদ ১ লাখ টাকা দেয়ার পরই আমার চেক, ষ্ট্যাম্প ও জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত পেয়েছি।
এলাকার সচেতন মহলের দাবী অতি দ্রুত যদি প্রশাসন এই দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে এই অবৈধ দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে গ্রামের অসহায়-গরীব মানুষরা সর্বশান্ত হয়ে পড়বে।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়