শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০১৯
সড়ক দুর্ঘটনায় চলনশক্তি হারানো মঞ্জুর হাসান (৫০)। চাকরি করতেন এফ আর টাওয়ারের ২১তম তলায়।
অগ্নিকাণ্ডে এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সেখান থেকে বের হতে না পেরে জীবনের অন্তিম মূর্হুতে মোবাইলে ছোট ভাই মেহফুজ জুবায়ের পলাশের সাথে কথা হয় তার বড় ভাই মঞ্জুরুল রহমান।
মৃত্যুর আগে মঞ্জুরের শেষ কথাগুলো কাছে বর্ণনা করেছেন তাঁর ছোট ভাই মোনাক হাসান শিমুল। পলাশের সঙ্গে বলেছিলেন এভাবে,
‘আমার অফিসে আগুন লেগেছে। আমিতো বের হতে পারছিনা। আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। সবাই অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি কোনো উপায় না পেয়ে অফিসের চেয়ারে বসে আছি। তোরা সবাই ভালো থাকিস। ছেলেমেয়েকে দেখে রাখিস। আর সবাইকে আমার জন্য দোয়া করতে বলিস।’
নিহত মঞ্জুরুল রহমান শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার বোয়ালিয়া পূর্বপাড়া গ্রামে মৃত মুনছুর রহমানের ছেলে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ঢাকার বেসরকারি কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন তিনি।
ছোট ভাই মেহফুজ জুবায়ের পলাশ বলেন, ঘটনার দিন বড় ভাই মঞ্জুর রহমান বনানীর এফ আর টাওয়ারের ২১ তলায় কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে ছিলেন। ওই সময় যে যার মতো অফিস ছেড়ে চলে গেলও আমার ভাই বের হতে পারেননি। সে সময় তিনি সহকর্মীদের বলেন ‘আল্লাহ হেফাজত করলে বাঁচবো, নয়তো নয়। আপনারা চলে যান আল্লাহ ভরসা ।’ এরপর থেকে আর ভাইকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি।
মঞ্জুর রহমানের আরেক ছোট ভাই শিমুল জানান, মঞ্জুর রহমান পরিবার নিয়ে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে থাকতেন। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। চাকরিরত অবস্থায় ২০০০ সালে অফিসের সামনের রাস্তায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হন। এরপর থেকে ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারতেন না। এক প্রকার পঙ্গু জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তারপরও কোম্পানি ভাইকে চাকরি থেকে বাদ দেয়নি। অফিসে যখন আগুন লাগে সবাই বাঁচার জন্য ছুটাছুটি করছিল কিন্তু ভাই পঙ্গু হওয়ায় কিছু করার উপায় ছিল না। অফিসে বসেই মোবাইল ফোনে বড়ভাই পলাশের সঙ্গে কথা বলছিল। আর দোয়া চেয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান, ভাইয়ের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়নি। স্ত্রী ও ছেলের ইচ্ছেই গতকাল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর ঢাকার মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরে একটি মসজিদের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়