শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২০
সাপাহারের ঐতিহ্যবাহী জবই বিল এখন অতিথি পাখিদের কলতানে মুখরিত। নতুন বছরের শুরু থেকেই সুদুর রশিয়া, সাইবেরিয়াসহ বিশ্বের শীতপ্রধান দেশ থেকে শত শত পাখি বিলে এসে অসম্ভব সুন্দর করে তুলেছে বিলের পরিবেশকে।
সরেজমিনে বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে পিয়াং হাঁস, পাতি সরালি, লেঙজা হাঁস, বালি হাঁস, পাতিকূট। দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে শামুকখোল, পানকৌড়ী, ছন্নি হাঁস ইত্যাদি। বিল এলাকা এখন অতিথিদের কারণে অনন্য হয়ে উঠেছে।
উপজেলা প্রশাসন বিভাগ সূত্র জানায়, নওগাঁ-১ আসনের এমপি খাদ্যমন্ত্রী বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদার সাপাহার উপজেলার জবই বিলটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ইতোমধ্যে অনেক পাখিপ্রেমীরা পাখি দেখতে বিল এলাকায় এসে ভিড় জমাচ্ছেন। বিলের পাড়ে পর্যাটকদের জন্য ঘোরাফেরা ও বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে ভবিষ্যতে সাপাহারের জবই বিলটি দেশের একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে রুপ নিতে পারে বলেও মনে করছেন আগত পর্যটকরা।
এই সুন্দর পাখিগুলোকেও এক শ্রেণীর বিবেকহীন ব্যক্তি অবাধে বিলে এসে শিকার করে হাটবাজারে বিক্রি করত। এমনকি গত বছরও এলাকার কতিপয় ব্যক্তি এ বিল হতে বেশ কিছু পাতি সরালি হাঁস ফাঁদ পেতে ধরে বিক্রি করার সময় তাদের জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্যরা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পরে ওই পাখি শিকারীদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল্যাণ চৌধুরীর নিকট নিয়ে এলে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাদের শাস্তি প্রদান করেন।
এরপর হতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কঠোরতা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের জোরালো নজরদারিতে বিল এলাকায় যেকোনো ধরনের পাখি শিকার বন্ধ রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে দেশ-বিদেশ হতে হরেকরকম পাখির আগমনে পুরো বিল এলাকা এখন পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে উঠছে।
বিলে অতীতের মত কচুরিপানা না থাকায় ও এলাকার মানুষ হিংস্র স্বভাবের হওয়ায় ধীরে ধীরে এক সময় বিলে পাখি আসাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার কিছু উপযোগী যুবক জবই বিলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন তৈরি করে বিলে অতিথি পাখিসহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
বিলে কোন কচুরিপানা না থাকলেও সরকারি ও বে-সরকারিভাবে মৎম্যজীবীরা খরা মৌসুমে বিলের পানি শুকিয়ে গেলে মা মাছ রক্ষায় বিলের মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় বাঁশ কাঠ ও কচুরিপানা দিয়ে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলে যার নাম কাঠা। খরা মৌসুমে মা মাছগুলো ওই স্থানে লুকিয়ে থাকে। বর্তমানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্যদের প্রচেষ্টাও মৎস্যজীবীদের বানানো কচুরিপানার কাঠা থাকায় এই শীত মৌসুমে অতীতের মতো আবারো দেশি-বিদেশি পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে শুরু করেছে।
ভবিষ্যতে বিলের বিশাল অংশে কচুরিপানা দিয়ে মাছসহ পাখিদের বড় ধরনের অভয়াশ্রম এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে বনাঞ্চল তৈরি করলে সারাবছর সেখানে পাখিদের আনাগোনা থাকবে। ফলে জবই বিল ফিরে পাবে তার ঐতিহ্য ও নাব্যতা। এমনই মত দিয়েছেন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান।
স/এমএস
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়