শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২০
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা। নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার শম্ভুপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মেঠো পথ ধরে কিছুদুর এগোতেই চোখে পড়লো চল্লিশোর্ধ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী তাঁর দুই কিশোরী মেয়েকে নিয়ে বাড়ির দেওয়ালে মাটি লাগাচ্ছেন। বয়স চল্লিশোর্ধ হলেও বাহ্যিকভাবে দেখলে যে কেউ ভাবতে পারে বয়স অনেক বেশী। অভাব-অনটন আর কায়িক পরিশ্রমের কারণে শরীরটা যেন ভেঙ্গে পড়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে করোনার প্রভাবে হাতে কাজ আর ঘরে খাবার না থাকার চিন্তা। স্বামী বাহিরে গেছেন দুপুরের খাবারের সংস্থান করতে।
আলাপ চারিতায় চল্লিশোর্ধ নারী আরতি জানান, পরিবারে স্বামী আর ২ মেয়ে নিয়ে ৪ জন। রাতে ১ কেজি চাল রান্না করে আলু ভর্তা করে অর্ধেকটা খেয়েছেন ৪ জন মিলে। বাঁকি অর্ধেক সকালে নুন দিয়ে পান্তা খেয়েছেন। স্বামী বাহিরে গেছে চালের সংস্থান করতে। বাজার এলে দুপুরে রান্না হবে। বাজার না এলে কি হবে জানিনা।
আলাপকালে এই নারী আরো জানান, তাদের নিজেদের কোন জায়গা নেই। খাস পুকুরপাড়ে ১০/১২টি পরিবার ঘর তুলে বাস করছেন। নেই নিজেদের কোন জমিজমা। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে জীবণ চলে। যখন কৃষিকাজ থাকে না তখন স্বামী শহরে যায় কাজের সন্ধানে। বর্তমানে কৃষিকাজ নেই। শহরে সবকিছু বন্ধ থাকায় স্বামী কাজে যেতে পারছেন না। এ কারণে অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। এভাবে দিন কাটালেও এখনও চেয়ারম্যান বা মেম্বাররা কোন খবর নেয়নি বলেও তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
জবিনের স্ত্রী আদরী জানান, স্বামী ইটের ভাটায় কাজ করে। করোনা ভাইরাসের কারণে ভাটার কাজ বন্ধ আছে। বাড়িতে ৫ জন সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার হচ্ছে।
কল্পনা রাণী নামক আরেক নারী জানান, রাতে গাছের সজনা আর আলু দিয়ে ভাত খেয়েছেন। সকালে খেয়েছেন পান্তা আর কাঁচা মরিচ। গত ১মাস থেকে মাছ চোখে দেখিনি। বাড়িতে বয়স্ক শ্বাশুড়ি আছে। এতোদিন তাঁরা কোন খাদ্য সহায়তা পাননি। বাড়িতে চাল, ডাল তৈল কিছুই ছিলনা। তবে আজ সকালে বরেন্দ্রভূমি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা থেকে বৃদ্ধ শ্বাশুড়িকে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ লিটার সয়াবিন তৈল, ১ কেজি লবণ ও ১ টি সাবান দিয়ে গেছে।
গ্রামের আরো ১০জন বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সময় আরো কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, হাতে কাজকর্ম না থাকায় তাঁরা বেকার সময় পার করছেন এবং খুব কষ্টে জীবণ-যাপন করছেন। কোন ধরণের সরকারি সহায়তা তাঁরা পাচ্ছেন না। মাঠে ধান কাটা শুরু না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ভাবে খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য তাঁরা জোর দাবী জানান।
এ বিষয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে কর্মরত বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন বিএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রউফ জানান, নওগাঁ জেলায় প্রায় ২লক্ষাধিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাস। এরা সবাই কৃষিমজুর। বছরে ৫/৬মাস কৃষি কাজ থাকে। অন্য সময়গুলিতে তাদের আগাম শ্রম বিক্রয় করে অথবা ধার দেনা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
বেকার সময়গুলিতে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা অন্যস্থানে কাজের সন্ধানে পাড়ি জমায়। বর্তমানে করোনার কারণে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আয়ের পথ বন্ধ। এ অবস্থায় তাঁরা কষ্টে জীবণ যাপন করছে। বিএসডিও’র পক্ষ থেকে সাধ্যমত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের চলমান খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষি মজুরদের কর্মহীন হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের খাদ্য সহায়তা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান এই উন্নয়ন সংগঠক।
স/মা
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়