শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২০
স্বাস্থ্য সেবা দোরগোড়ায় পৌছে দিতে নওগাঁয় ইউনিয়ন পর্যায়ে চালু করা হয়েছিল ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ‘ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স’। যার সুবিধা ভোগ করতো প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষরা। গ্রামের কাঁচা-পাকা মেঠো পথে সাইরেন বাঁজিয়ে ছুটে চলা সেই অ্যাম্বুলেন্স গুলো এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় দ্বিতীয় লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জেলার ১১ টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স চালু করা হয়েছিল। দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরী করা অ্যাম্বুলেন্সের ছাদে ঘূর্ণায়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণের জন্য লাগানো হয়েছিল সাইরেন হর্ণ। আর ভেতরে ছিল দুই সিটের গদি আঁটা আসনে সাহায্যকারী ও প্রসূতি শুয়ে-বসে থাকার সু-ব্যবস্থা করে সৌন্দর্য দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের রুপ দেওয়া হয়। ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে জরুরি প্রয়োজনে ফোন নাম্বার দেয়া হয়। ছাদে ঘূর্ণয়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সাইরেন বাজিয়ে গ্রামের কাঁচা-পাকা মেঠো পথে ছুটে চলত সেই অ্যাম্বুলেন্স। দিন-রাত যে কোন সময় কল করে ঠিকানা জানিয়ে দিলেই বাড়ির দোরগোড়ায় গিয়ে হাজির হতো অ্যাম্বুলেন্সটি।
অ্যাম্বুলেন্সটি দেখভালের জন্য অনেকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের। বেতনভুক্ত নির্দিষ্ট কোন চালক না থাকায় কখনো গ্রাম পুলিশ আবার কখনো স্থানীয়দের দিয়ে পরিচালনা করা হতো। অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সহজেই রোগী আনানেয়া করা যেত। কিন্তু সেই অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ব্যাটারি না থাকায় এ অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন থেকে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থেকে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সচেতনদের দাবী অ্যাম্বুলেন্সগুলো পুনরায় চালু করা হোক।
তিলকপুর ইউনিয়নের অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহিন বলেন, আমার আগে ওই অ্যাম্বুলেন্স ২/৩জন চালিয়েছিল। পরে আমি এক বছরে প্রায় ২০০-২৫০ জন রোগীকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ভাড়া নিয়ে কোন দরদাম করতাম না। যে টাকা পাওয়া যেত তা দিয়ে চলা সম্ভব ছিলনা। এছাড়া নিজেও কিছু টাকা খরচ করে মেরামত করেছিলাম। প্রায় ৯মাস থেকে ব্যাটারির অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এলাকাবাসীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সদর উপজেলার তিলকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। ইঞ্জিন চালিত (ডিজেল বা গ্যাস) হলে ভাল চলতো এবং জনগন উপকৃত হবে। ৪৪ হাজার টাকা দিয়ে একবার ব্যাটারি পরিবর্তন করা হয়েছিল। বছর খানেক পর নষ্ট হয়েগেছে। এখন মরিচা ধরছে। ইউনিয়নে কোন ফান্ড না থাকায় ব্যাটারি পরির্বতন করা সম্ভব হচ্ছে না। রোগী ছাড়া কেউ উঠতেও চাইনা। যে শ্রম দিবে দিনে যদি কোন রোগী না পাই তাহলে তো তার পেট চলবে না।
বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধূরী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়ে তেমন সুফল নিয়ে আসতে পারিনি। রোগীরা চাই দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর এটা ব্যাটারির সাহায্যে চলে ধীর গতিতে। এছাড়া চালক সংকট। ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একবার মেরামত করা হয়েছিল। বছরখানেক চলার পর আবারও নষ্ট। গত ৮ মাস থেকে এখন অবধি পড়ে আছে।
নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো: শাহনেওয়াজ বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে দুরবর্তী বা প্রত্যান্ত এলাকার মানুষদের হাসপাতালে আনানেয়ার সুবিধার জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিল। সামনে একটা মিটিং আছে। যেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা আসবেন। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
স/সা
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়