শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১৩ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নওগাঁ দর্পণ ডেস্ক :
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২২
কাজের প্রতি আন্তরিকতা থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা পাওয়া যায়। সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন ইমরান হোসেন ও সুমি আক্তার দম্পতি। তারা এখন সফল ফলচাষি। মাত্র ৩ বছরে পেয়েছেন অভাবনীয় সফলতা।
তাদের চাষ পদ্ধতি আর সফলতা দেখে এলাকার মানুষদের কাছে হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয় আদর্শ। বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার ফলচাষিরা। ফলন ভালো দেখে অনেকেই উৎসাহী হয়ে বাগান থেকে কমলার চারা কিনছেন।
জানা গেছে, জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনি গ্রামের ইমরান হোসেন উজ্জ্বল বসবাস করতেন ঢাকা'র সাভারে। উদ্যোক্তা ইমরান হোসেনের টেলিকমের দোকানের ব্যবসা ছিল। করোনার সময় ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়।
এরপর কৃষি কাজের দিকে মনোযোগ দেন। নিজের গ্রাম জয়পুরহাটের ভিকনিতে চলে আসেন। নিজের চিন্তা থেকে এক বিঘা জমিতে রোপণ করেন কয়েকটি (বারি কমলা-২) জাতের কমলার চারা। সেই চারাগুলো থেকে গ্রাফটিং করে আরও চারা বাড়ান। এখন তার বাগানে ১৩০টি কমলার গাছ রয়েছে। কমলাগুলো বারি-২ জাতের। ১৩০টি গাছের মধ্যে ৬০টি গাছে কমলা ধরেছে। প্রতিটি গাছে ১৫-৪০ কেজি পর্যন্ত কমলা ধরেছে। প্রতি কেজি কমলা পাইকারি ১৩০ টাকা করে দাম বলছেন ব্যবসায়ীরা।
উদ্যোক্তা ইমরান বলেন, আমি এবং আমার স্ত্রী সুমি আক্তার এই কমলার বাগানের যত্ন করে থাকি। ২০১৯ সালের শেষ দিকে প্রথম আমি কমলার চারা রোপণ করি এখন পর্যন্ত এই জমিতে ১৩০ টি গাছের পিছনে আমার প্রায় দুই লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।বর্তমানে আমার ১৩০টা গাছে কমলা ধরেছে। আমি আশা করছি এখান থেকে কমপক্ষে ৩০ মন কমলা বিক্রি হবে। আমি ১৫০ টাকা কেজি দরে এই সুস্বাদু মিষ্টি কমলা বিক্রি করছি।এবং গাছের কলমের চারা বিক্রি করেছে তিন লক্ষ টাকার মত।
বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় প্রতিদিন অনেক লোক আসছে আমার এই কমলা বাগান দেখতে। আমি আশা করছি এ বছরই আমার সমস্ত খরচ মিটিয়ে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা আয় হবে।যারা বেকার যুবক আছেন চাকুরীর পিছনে না ছুটে তারা এই কমলার বাগান করে বেকারত্ব দূর করতে পারেন।
ইমরানের স্ত্রী সুমি আক্তার খোলা কাগজকে বলেন, আমি ও আমরা স্বামী ফল না আশা পর্যন্ত হতাশ ছিলাম। কারণ আশেপাশের লোকজন অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। অনেকেই বলেছেন ফল হবে না, ফল যদিও হয় তাহলে টক হবে। মানুষ খেতে পারবে না। কিন্তু আমরা হাল ছাড়েনি, আমি এবং আমার স্বামী প্রতিনিয়ত বাগানের পরিচর্যা করেছি আল্লাহর রহমতে তার কারণে ভালো ফল পেয়েছি। কমলা অনেক ভালো এবং সুমিষ্ট। আমি সংসারে কাজের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা করি।
কমলার চারা কিনতে আসা দিনাজপুরের জাহিদ ইকবাল বলেন, আমি কমলা বাগানের বিষয়টি ফেসবুকে দেখে জেনে এখানে এসেছি। বাগানটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। বাগানে কমলার ফলন দেখার মতো হয়েছে। আসলে বাংলাদেশের আবহাওয়াতে আমাদের অঞ্চলে এমন কমলা হবে তার ধারণা ছিল না। এই কমলা মিষ্টিও বটে।আমি এখান থেকে ৩০টি গাছ কিনেছি।
আক্কেলপুর উপজেলার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: ইমরান হোসেন জানান, বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে খ্যাত আক্কেলপুরের গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনি গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী যুবক ইমরানের কমলা চাষ একটি বিপ্লব। কমলা সাইট্রাস জাতীয় ফল, এটি পাহাড়ে হয়। কিন্তু এটি এখন সমতলেও হচ্ছে। অনেক বেকার যুবক চাইলে কমলা চাষ করতে পারেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ফলবাগান সৃজন কর্মসূচির আওতায় কমলার চারা প্রদান, সার, কীটনাশক ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ এবং কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে ।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়