ব্রেকিং:
করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব নওগাঁর সাপাহারে বিএসএফের হাতে আটক দুই কলেজ ছাত্র তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী নওগাঁয় মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা ও মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক সরানো হচ্ছে নওগাঁর ঢাকা বাসস্ট্যান্ড নওগাঁয় জানালার গ্রিল কেটে ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৭০ লাখ টাকা লুট

শুক্রবার   ০১ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ১৬ ১৪৩২   ০৬ সফর ১৪৪৭

নওগাঁ দর্পন
সর্বশেষ:
করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব নওগাঁর সাপাহারে বিএসএফের হাতে আটক দুই কলেজ ছাত্র তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী নওগাঁয় মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা ও মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক সরানো হচ্ছে নওগাঁর ঢাকা বাসস্ট্যান্ড নওগাঁয় জানালার গ্রিল কেটে ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৭০ লাখ টাকা লুট
১৫৮

বিপাকে নওগাঁর আম চাষি-ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২৫  

 

ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের টানা ছুটিতে ক্রেতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আমের কেনাবেচা। এতে কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে বলে দাবি করেছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। টানা ১০ দিন ব্যাংক, কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহন বন্ধ থাকায় চলতি মৌসুমে আম নিয়ে বিপাকে পড়েন সেখানকার কারবারিরা।

সাপাহার উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের টানা ১০ দিনের ছুটির মধ্যে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত গরম পড়ে। এতে আম্রপালি জাতের আম একসঙ্গে পাকতে শুরু করে। এদিকে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর মানুষজন ঈদের ছুটিতে গ্রামে। আবার কুরিয়ার সার্ভিস এবং পরিবহনব্যবস্থাও বন্ধ। ফলে সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে আম পৌঁছানো যায়নি।

নওগাঁ জেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, আম্রপালি জাতের আম আগামী ১৮ জুন থেকে বাজারে আসার কথা। কিন্তু অতিরিক্ত গরম, বৈরী আবহাওয়া, গাছে আগাম মুকুল আসাসহ নানা কারণে এ বছর আম্রপালি জাতের আম ৮-১০ দিন আগে পাকতে শুরু করেছে। 

সাপাহার উপজেলার সিমু শিপলা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে লাভের আশায় ৪০০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের আমগাছ লাগিয়েছিলাম। এ বছর গাছে আমও ধরেছে ভালো। কিন্তু সরকারি আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম নামাতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।’

সাখাওয়াত হোসেনের অভিযোগ, আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশের দিন বলা হয়েছিল, যদি কারও আম আগাম পেকে যায়, তাহলে উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি নিয়ে গাছ থেকে আম পাড়া এবং বিক্রি করা যাবে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ঈদের ছুটিতে ইউএনও এবং উপজেলা কৃষি অফিসারের কাছে আবেদন করে আম পাড়ার অনুমতি পাননি। ফলে প্রতিদিনই লক্ষাধিক টাকার আম অবিক্রীত থাকছে এবং তা ফেলে দিতে হচ্ছে।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিসে গেলে তারা অনুমতির জন্য ইউএনও অফিসে যেতে বলেন। আবার ইউএনও অফিসে গেলে তারা কৃষি অফিসে যেতে বলেন। প্রতিদিন শত শত আমচাষি অনুমতির জন্য এই দুই অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেও গত বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এই সমস্যার কারণে আমচাষিরা গাছ থেকে আম পাড়তে পারছেন না। যার কারণে আমাদের লোকসান দিন দিন বেড়েই চলেছে।’

সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিসের বেঁধে দেওয়া আমের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ বছর আম পাড়া সম্ভব হচ্ছে না। বৈরী আবহাওয়া আর অতিরিক্ত গরমের কারণে ক্যালেন্ডারে ঘোষিত তারিখের ১০-১২ দিন আগেই আম পেকে গেছে।

তিনি বলেন, ‘বিপুল পরিমাণ পাকা আম নিয়ে আমরা পড়েছি ভীষণ বিপদে। প্রতিদিন প্রত্যেক আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে আম বিক্রি না হওয়ায় অবিক্রীত আম ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আম একটি দ্রুত পচনশীল খাদ্যপণ্য। এটি সংরক্ষণ করার কোনো পদ্ধতি এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তাই প্রতিদিনের আম প্রতিদিনই বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ১০ দিন ঈদের ছুটি থাকার কারণে ব্যাংক বন্ধ, কুরিয়ার সার্ভিস পরিবহন বন্ধ, সর্বোপরি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তারা আম কেনাবেচা নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়েছেন। আমচাষিদের কথা বিবেচনা করে আম চাষ হয়, এমন স্থানগুলোতে ব্যাংক খোলা এবং কুরিয়ার সার্ভিস ও পরিবহনব্যবস্থা সচল রাখলে এ ক্ষতি উতরে যাওয়া সম্ভব হতো।’

একই রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সাপাহার আমের আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনও।

তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে আম্রপালি জাতের আম মণপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই উচ্চ মূল্যের আম অবিক্রীত থেকে আড়তেই পচে যাওয়ায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েছেন। চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার আম পচে-গলে নষ্ট হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা।’

ইমাম হোসেন বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মানতে গিয়ে আজ আমরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। আগামীতে ভাগ্যে কী আছে, তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন!’

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের আমের ক্যালেন্ডারে আম পাড়ার যে তারিখ নির্ধারণ করা ছিল, চলতি বছর তা থেকে তিন দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিস সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আমের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। এটাও বলা হয়েছে, যদি কোনো আম অগ্রিম পাকা শুরু করে, তাহলে স্থানীয় ইউএনও অফিস অথবা কৃষি অফিসের অনুমতি সাপেক্ষে আম পাড়া যাবে। সে ক্ষেত্রে কেউ আবেদন করলে তাকে আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আকস্মিক অতিরিক্ত গরমে আমের কোনো ক্ষতি হবে না। নওগাঁয় চলতি বছরে আমের বাজার থেকে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, তা পুরোপুরি সফল হবে।

নওগাঁ দর্পন
এই বিভাগের আরো খবর