শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ এর আওতায় বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে নির্বাচিত ৫ জয়িতা সমস্ত বাধা অতিক্রম করে নতুন উদ্যোমে এগিয়ে চলেছে। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু, নিজে অশিক্ষিত হয়েও এবং অর্থনৈতিক সমস্যাসহ সব রকমের বাধা অতিক্রম করে তাঁর সন্তানদের সফলভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা, সমাজে বিভিন্ন মানবতার কাজ করে সমাজে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে যে নারী, অতি দরিদ্র হয়েও নিজের উদ্যোগে কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করে যে নারী, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে নিয়ামতপুর উপজেলার জয়িতা অন্মেষনে বাংলাদেশ এর জয়িতা নির্বাচন কমিটির নিকট জয়িতা নির্বাচিত হয়েছে তারা হলেন নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ভালাইনঘাটি গ্রামের আবুল কাশেম ও রেহেনা বিবির কন্যা সাথী খাতুন, সফল জননী নারী উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের ভাদরন্ড গ্রামের গ্রামের রাজেন্দ্র সরদার ও আলতী রানীর কন্যা সীতলী রানী, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, সদর ইউনিয়নের বালাহৈর গ্রামের মোঃ খোরশেদ আলম ও সফিরুন নেছার কন্যা মোসাঃ সাহেরা খাতুন, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের ভাদরন্ড গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাদিরা বেগম এবং শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের ঝাঁজিরা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী মোসাঃ বিলকিস পারভীন। এরা পাঁচ জয়িতা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
সাথী খাতুন (নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু) : এসএসসি পাস করার পর আমার পারিবারিকভাবে বিষেয় হয়। কিছুদিন পর আমার স্বামীর আচরণ পাল্টাতে থাকে। আমার সাথে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করতে থাকে। আমাকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আমার গর্ভে ৪ মাসের সন্তান থাকার কারণে আমাকে তালাক দিতে পারেন নাই। আমি বাবার বাড়ীতে চলে আসি। বাবার উৎসাহে আমি আবাব লেখাপড়া শুরু করি। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হই। আমার স্বামী আমার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করার জন্য আমার পেটে লাথি মারে। কিন্তু তাতেও সন্তান নষ্ট করতে না পারায় সন্তান জন্মের ৪ মাসের মাথায় আমাকে তালাক দেন। আমি ৪ মাসের সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়ি। আমার স্বামী আমার ও আমার সন্তানের কোন খরচ দেন না এমনকি কোন খোঁজ খবর পর্যন্ত নেন নাই। আমার বাবার উৎসাহে আমি রাজশাহী নিউ ডিগ্রী গভঃ কলেজে অনার্থ এ ভর্তি হই। পাশাপাশি বাড়ীতে সেলাই ্এর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমি বর্তমানে ভাল রয়েছি।
সিতলী রানী (সফল জননী নারী) : শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমি ৪০ দিনের কর্মসূচীতে মাটি কেটে চার সন্তানের লেখাপড়া চালিয়েছি। আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে কর্মরত আছেন। দ্বিতীয় ছেলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধ্যায়নরত আছেন। বড় মেয়ে কলেজ পড়া অবস্থায় বিয়ে দেই এবং ছোট মেয়ে বর্তমানে নিয়ামতপুর সরকারী কলেজে বিএ পড়ছেন। ৫১ বছর বয়সেও ৪ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষিত করে তুলেছেন। ৪ সন্তানের পড়ালেখার খরচ চালিয়েও শুধু মাত্র নিজের পরিশ্রমের কারণে সাংসারের অবস্থাও আগের চেয়ে অনেক ভালো। বিভিন্ন কু-সংস্কার থাকা সত্ত্বেও সব কু-সংস্কার ভেঙ্গে কন্যা সন্তানদের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। তিনি অশিক্ষিত হয়েও সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করেছেন।
মোসাঃ সাহেরা খাতুন (অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী): অল্প বয়সে বিধবা হয়ে অর্থনৈতিকভাবে একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েন। স্বামী তড়িতায়িত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে মহিলা হিসাবে নিয়ামতপুর উপজেলা সদরে গ্রামীণ ডিজিটাল সেন্টার করে বর্তমানে নিজস্ব ডিজিটাল সেন্টার, ষ্টেশনারী, স্ট্যাম্প ভান্ডার এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অর্থনৈতিক সামাজিক প্রতিন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও জীবন সংগ্রাম করে তিনি আর্থিকভাবে সফল হয়েছেন।
বিলকিস পারভীন (শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী) : অদম্য মেধাবী ও কেরাত হামদ-নাত এ বার বার উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন। বিলকিস পারভীনের পিতা একজন আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এইচএসসিতে লেখাপড়াকালীন আমার বাবা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাখিল মাদ্রাসায় কর্মরত বিএসসি শিক্ষকের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের কিছুদিন দিন পর আমার বাবা মারা যায়। আমার স্বপ্ন ছিল বাবার মত লেখাপড়া শেষ করে আদর্শ শিক্ষক হবো। বিয়ের পর আমার চেষ্টা ও স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে যাই। বয়স যখন ১৮ বছর ১৪ দিন তখন আমি পিইডিপি-২ এর আওতায় প্রকল্পে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরীর জন্য আবেদন করি এবং চাকুরী হয়। এর কিছুদিন পর রাজস্ব খাতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে সেখানেও আবেদন করে চুড়ান্তভাবে টিকে যাই। তখন প্রকল্পের চাকুরীতে ইস্তফা দিয়ে রাজস্ব খাতে যোগদান করি। পাশাপাশি লিখাপড়া চালিয়ে যাই। নওগাঁ সরকারী কলেজ থেকে বিএ এবং এমএ সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হই। এছাড়া নওগাঁ পিটিআই হতে সি-ইন-এড, রাজশাহী টিটি কলেজ থেকে বিএড এবং এমএড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।
নাদিরা বেগম বেগম (সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেন যে নারী) : আমি দরিদ্র কৃষক আজিজুর রহমানের চার কন্যার একজন। ১৯৯০ সালে দারিদ্রতার কারণে বাল্য বিয়ের শিকার হই। বিয়ের পর ১৯৯১ সালে এসএসসি পাশ করি। কিন্ত সংসারের অভাব ও সন্তান জন্মানের কারণে কলেজে ভর্তি হতে পারি নাই। পরবর্তীতে স্বামীর অনুপ্রেরণায় ১৯৯৬ সালে নিয়ামতপুর ডিগ্রী কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করি এবং একই বছরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করি এবং জয় লাভ করি। আমি আরো চারজন মহিলাকে লেখাপড়ায় উৎসহিত করি। সে সময় নারী সমাজের কল্যাণ ও সমাজে নারীর অধিকার নিয়ে অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আলোচনা ও সমাবেশ করে সমাজের অবহেলিত নারীদের উৎসাহ দিতাম। ২০০৩-২০০৪ সালে একটি বেসরকারী সংস্থা তিলোত্তমার হয়ে ভাবিচা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে নিরাপদ মাতৃত্ব, স্বাস্থ্য সেবা ও স্যানিটেশন সম্পর্কে সমাজের অবহেলিত ও অজ্ঞ মহিলাদের সচেতন করে তুলেন। ২০০৮ সালে সিডিএস হতে শতভাগ পায়খানা, নিরাপদ পানি, ও হতদরিদ্রদের মাঝে সাহায্যার্থে কাজ করেন। ২০১০ সাল হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়ন, যৌতুক ও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে ও নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রদান করি। ২০১৩ সালে স্নাতক পাশ করি বর্তমানে মাষ্টার্স প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত। ২০১৭ সালে নিয়ামতপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হই। বর্তমানে আমার তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মাষ্টার্স শেষ করেছে, মেঝ ছেলে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে এবং ছোট ছেলে এইচএসসিতে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। আমি সমাজে পিছিয়ে পড়া নারী গোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
স/সা
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়