বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০১৯
সারা দেশের ন্যায় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ধান ও গমের উৎপাদন। কিন্তু সেই তুলনায় নেই পর্যাপ্ত ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক খাদ্য গুদাম। যার কারণে প্রতি মৌসুমে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান ও গম সংরক্ষনের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। উপজেলায় আর একটি নতুন খাদ্যগুদাম বর্তমানে সময়ের দাবী। আর পুরাতন খাদ্যগুদামের সংস্কার করা অতিব প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষ।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় উৎপাদিত ধান, গম, চাল সংরক্ষণ ও কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি সরকারি ভাবে ধান ও গম সংগ্রহ করার জন্যআশির দশকে রাণীনগর বাজারের অনুকুলে স্থাপন করা হয় রাণীনগর এলএসডি (খাদ্যগুদাম)। সেই সময় এর ধারন ক্ষমতা ছিলো সাধারনভাবে ১৫শত মেট্টিন টন এবং সর্বোচ্চ ভাবে ১৯শত মেট্টিক টন যা বর্তমান চাহিদার তুলনায় অনেক অনেক কম।
বর্তমানে এই খাদ্যগুদাম অনেক সমস্যায় জর্জড়িত। খাদ্যগুদামের চারদিকে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় গুদামে প্রবেশ করার জন্য প্রশস্ত কোনরাস্তা নেই। যার কারণে একমাত্র সরু রাস্তা দিয়ে গুদামে মাল বোঝাই ট্রাক চলাচলের সময় সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজটের। তখন চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী সাধারন মানুষদের। এছাড়া গুদাম ঘরগুলোর দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় বর্তমানে জরাজীর্ন অবস্থা। ঘরের ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তার। গুদামের আবাসিক এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক। বাধ্য হয়েই গুদামের কর্মকর্তাদের বাহিরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। এছাড়াও গুদামে নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ পাহারাদার এবং তাদের থাকার কোয়ার্টার। অথচ রাণীনগর বাজারের চৌরাস্তা নামক সংলগ্ন স্থানে গুদামের নামে প্রায় ১৪শতাংশ জায়গা বছরের পর বছর অলস পড়ে আছেযা স্থানীয়রা ব্যবহার করছে।
অপরদিকে জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধানের মোকাম হিসেবে পরিচিত উপজেলার বাণিজ্যিক রাজধানী আবাদপুকুর হাট। এক সময় এই হাটের পাশে ধান মজুদ করে রাখারজন্য খাদ্য গুদামের আওতায় টিপিসি নামক সরকারি জায়গা ছিলো। যেখানে সরকারি ভাবে ক্রয়কৃত ধানগুলো গুদামজাত করার পূর্বপর্যন্ত মজুদ রাখা হতো। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও বর্তমানে এই জায়গাটির কী অবস্থা কেউ তা জানে না এমনকি সংশ্লিষ্টকর্তৃপক্ষের হাতেও এই জায়গা সম্পর্কে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।
উপজেলার সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পূর্বাঞ্চল আবাদুপুকর এলাকায়। বর্তমানে আবাদ পুকুর হাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই এলাকা ছাড়াও পাশের নাটোরের সিংড়া,বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও আদমদীঘি এলাকার কৃষকরা তাদের ধান বিক্রয় করার জন্য আবাদপুকুর হাটে নিয়ে আসেন। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এই হাটে আসেন উন্নত মানের ধান কেনার জন্য। উপজেলার বর্তমান খাদ্যগুদামের ধারন ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে প্রতিবছরই সরকারিভাবে ধান কিংবা গম ক্রয়ের সময় বরাদ্দ দেওয়া হয় খুবইকম। যার কারণে এই অঞ্চলের কৃষকরা তাদের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর।
অপরদিকে সরকারি ভাবে চাল সংগ্রহের সময় খুবই কম বরাদ্দ দেওয়ার কারণে উপজেলার ছোট-বড় অধিকাংশ চাতালমিলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পথে বসেছে অনেক চাতাল মিলাররা।
চাতাল মালিক মকলেছুর রহমান বাবু বলেন উপজেলায় যখন ধানের উৎপাদন কম হতো তখনকার সময়ের জন্য বর্তমান খাদ্যগুদাম সঠিক ছিলো। কিন্তু বর্তমানে উপজেলায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে ধানের উৎপাদন অনেকগুন বৃদ্ধি পেলেও ধারন ক্ষমতাবৃদ্ধি করা হয়নি খাদ্যগুদামের। যার কারণে উপজেলার কৃষক ও চাতাল মালিকদের প্রতি বছরই গুনতে হচ্ছে লোকসান। যার কারণে আমি অনেক বছর হলো চাতালের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। তবে আমাদের উপজেলার জন্য নতুন একটি আধুনিক মান সম্মত খাদ্যগুদাম খুবই প্রয়োজন।
আবাদপুকুর এলাকার ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বলেন দেশের সবকিছুতেআধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও আমাদের উপজেলার খাদ্যগুদামে এখনোআধুনিকতার কিংবা উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। তবে ধানের জন্য আবাদুপুকর এলাকা প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে এই এলাকায় আধুনিক মানসম্মত একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজনীয় এবং এই অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবী। কারণ আবাদুপুকর থেকে রাণীনগর খাদ্যগুদামের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। তাই খাদ্যগুদামে ধান, চাল কিংবা গম সরবরাহের জন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত পথ খরচ গুনতে হয়। আর এই এলাকায় একটি নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হলে শুধু এই উপজেলাই নয় আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রামের কৃষকরা উপকৃত হবেন। এছাড়াও সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। এই এলাকার বেকার মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং নতুন একটি খাদ্যগুদামকে ঘিরে চাঙ্গা হবে এই এলাকার অর্থনৈতিকব্যবস্থা।
রাণীনগর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহা. শরিফুল ইসলাম(লিটন) বলেন, বর্তমানে এই উপজেলার জন্য প্রায় ৩হাজার মেট্টিকটন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি আধুনিক মান সম্মত খাদ্যগুদাম খুবই প্রয়োজন। বর্তমান খাদ্যগুদামের ধারণ ক্ষমতা প্রয়োজনের চাইতে খুব কম হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের কৃষক ও মিলাররা সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। যার প্রভাবে উপজেলার ছোট-বড় অনেক চাতাল মিল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কৃষকরা ধান কিংবা গমের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে চাষাবাদ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছেন মধ্যসত্যভোগীরা। তিনি আরো বলেন বর্তমান খাদ্যগুদামের অবস্থাখুবই নাজুক। নতুন করে এর ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কোন জায়গা নেই কারণ এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন মার্কেট ও ভবন।
স/নু/১১
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়