শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ১৫ ১৪৩০ ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২১
স্বামী ধীরেন্দ্রনাথ সরকার গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মুড়ি বিক্রি করতেন। এ পেশার সামান্য আয়ে তাঁদের চলত সংসার। একদিন হঠাৎ করেই স্বামী ধীরেন্দ্রনাথ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। সংসারে নেমে আসে চরম দুর্দিন। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুই শিশুসন্তান নিয়ে দিশোহারা হয়ে পড়েন অনিমা রানী।
একদিকে সংসারে অভাব-অনটন, অন্যদিকে শরিক ও প্রতিবেশীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অকুল সাগরে ভাসতে থাকেন অনিমা রানী। বড়ছেলে বিপ্লব কুমার সরকার তখন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোটছেলে বিনয় কুমার সরকার স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। শরিকদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে স্বামীর ভিটেমাটির মায়া ত্যাগ করে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে একদিন চলে আসেন বাবার বাড়ি। শুরু হয় বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
সংগ্রামী এই নারী নওগাঁর মান্দা উপজেলার চকমনোহরপুর গ্রামের মৃত রোহিনী কান্ত কবিরাজের মেয়ে। ১৯৮৮ সালে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।
বাবার বাড়িতে ফিরে আসার পর ঠাঁই হয় ভাই দয়ানিধি কবিরাজের ঘরে। ভাইয়ের সহযোগিতায় দুই ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সংকল্প করেন। ভাই দয়ানিধির সহযোগিতার পাশাপাশি ছাগলসহ হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন।
তাঁর কঠোর সাধনা আর অক্লান্ত পরিশ্রমে বড়ছেলে বিপ্লব কুমার এখন মাষ্টার্সে পড়াশোনা করছে। ছোটছেলে বিনয় কুমার এবারে বিবিএ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
জয়িতা নারী অনিমা রানী জানান, ‘সংসারকে বুঝে ওঠার আগেই আমার স্বামী মারা যান। শরিকদের অত্যাচারে জীবনের প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলি। স্বামীর ভিটায় টিকতে না পেরে দুই সন্তানকে নিয়ে একদিন বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হই। চরম এ অবস্থায় ভাই দয়ানিধি পরামর্শ ও সহযোগিতা দেন। তাঁর অবদানে আজ এতদুর এগিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেদের মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা আর কঠোর পরিশ্রমে আমি সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি। ছেলে দুটোর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে আমার সারাজীবনের শ্রম সার্থক হবে। ভাইয়ের বাড়ি ছেড়ে ছেলেদের নিয়ে আলাদা বাড়িতে নতুনভাবে সংসার শুরু করার ইচ্ছে রয়েছে।
জয়িতা নারীর ভাই দয়ানিধি কবিরাজ বলেন, ‘বোন অনিমা রানীর বিধবা হওয়ার সংবাদে আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। পারিপার্শ্বিকতায় একদিন স্বামীর বসতভিটার মায়া ত্যাগ করে দুই সন্তানকে নিয়ে বোনে অনিমা আমাদের এখানে চলে আসেন। অবস্থা দেখে তাঁদের ফেলে দিতে পারিনি। তাঁদের আশ্রয়ের পাশাপাশি ভাগ্নে দুটোকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বোনকে সহায়তা করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই তাঁদের জীবনে সুদিন ফিরে আসবে।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এসএম ফজলুর রহমান বলেন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেছেন অনিমা রানী।
‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের আওতায় উপজেলায় পাঁচ জয়িতা নারীর নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনিমা রানী একজন। রোকেয়া দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের সম্মাননা প্রদান করা হবে।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়