শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ১৪ ১৪৩০ ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ জানুয়ারি ২০২০
ফাইল ছবি
সেতু নির্মাণকাজে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ঘটা করে নির্মাণকাজের ভিত্তিফলকও উন্মোচন করেন। কিন্তু গত দেড় বছরেও কাজ শুরু হয়নি। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদের শিবগঞ্জ ও কালনা ঘাটে দুটি সেতু নির্মাণকাজের কোনো ভূমিকাই যেন নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ওই দুটি স্থানে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের নড়বড়ে সাঁকোতে নদ পার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (সিআইবিআরআর) প্রকল্পের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মহাদেবপুরে আত্রাই নদের ওপর উপজেলার শিবগঞ্জ ঘাট ও কালনা ঘাট এলাকায় দুটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প পাস হয়। শিবগঞ্জ ঘাটে ২৯৪ মিটার সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ২৬ কোটি ৬৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা। আর কালনা ঘাটে ৩৫০ মিটার সেতু নির্মাণকাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। দরপত্র আহ্বানের পর যথাযথ নিয়মে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। কাজ দুটি পান মিলন-এসিএল-এমএইচসিএল নামে নওগাঁর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি কাজ শুরুর কার্যাদেশ পান ২০১৮ সালের ১৪ মে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবগঞ্জ ও কালনা ঘাট দুটিতে সেতু নির্মাণের ভিত্তিফলক দেখা গেলেও নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। ওই দুটি স্থানেই বাঁশের সাঁকোতে করে লোকজন নদ পারাপার হচ্ছে। ভিত্তিফলকে লেখা রয়েছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার একই দিনে (২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর) সেতু দুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন।
শিবগঞ্জ ঘাটের বাঁশের সাঁকোর ছবি তোলার সময় সাঁকো পার হচ্ছিলেন শিবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গৌতম চন্দ্র। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, ‘এই এলাকার মানুষের একটি বড় স্বপ্ন যে এখানে একটি সেতু হবে। কিন্তু সেই আশা মনে হয় সহসা পূরণ হবে না। গত নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সময় আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওটা ছিল লোক-দেখানো।’
কালনা ঘাটে গিয়ে কথা হয় মহিষবাথান গ্রামের বাসিন্দা হাতুড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এমপি মহোদয় বেশ ঘটা করে এখানে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ হবে বলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেলেন। জনসভায় বক্তব্যও দিলেন। লোকজনের তালিও পেলেন। এখন আর সেতু নির্মাণের কোনো খবর নেই। ঠিকাদার একটা ইটও ফেলেননি। অথচ এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে হাজার হাজার মানুষের উপকার হবে।’
এ ব্যাপারে এলজিইডি নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম বলেন, ‘এলজিইডির বাস্তবায়নে ওই দুটি সেতু নির্মাণে সেতুর যে নকশা পাঠানো হয়েছিল তাতে বড় ধরনের ভুল ছিল। সেতুর দূরত্বও বেশি দেখানো হয়েছিল। এসব ভুলভ্রান্তি দূর করে নতুন করে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। নতুন করে পাঠানো প্রকল্পটি এরই মধ্যে পাস হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী মাসে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা যাবে। দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন হলে আগামী অর্থবছরে ওই সেতু নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে।’
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স/এমএস
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়