শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২০
জীবিকা নির্বাহের জন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবু সাঈদকে সবজির দোকান করে দিয়েছেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু তাহির। মঙ্গলবার বদলগাছী-আক্কেলপুর সড়কের চক-তাহের নামক এলাকার যাত্রী ছাউনিতে এই দোকানটি করে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে আবু সাঈদকে নগদ দুই হাজার টাকাও দেয়া হয়েছে।
উপজেলার কোলা ইউনিয়নের চকতাহের গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবু সাঈদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ছোটবেলা থেকেই চোখে ভালো দেখতে পেতেন না। তিনি এক সময় গ্রামের মসজিদের চাল তুলতেন। তার বিয়ে করেন তিনি। বিয়ে করার পর ভ্যানে করে বেকারির বিস্কিট ও রুটি বিক্রি করে পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দিন দিন দৃষ্টিশক্তি কমে আসায় সেই ব্যবসাটিও ছেড়ে দেন। পাঁচ মাস আগে বদলগাছী-আক্কেলপুর সড়কের চক-তাহের যাত্রী ছাউনিতে ছোট্ট পরিসরে কয়েক কেজি আলু ও কিছু শাক-সবজি নিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছিলেন। এবং তার এ কাজে তার স্ত্রী সেলিনা ও ১০ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ সহযোগিতা করেন।
কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার করণে দোকানে বেশি মালামাল ওঠাতে পারেননি তিনি। কিছুদিন আগে ওই পথ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাঃ আবু তাহির আক্কেলপুর যান। আক্কেলপুর থেকে আসার পথে তিনি চক তাহের এলাকার ঐ মোড়ে এসে থামেন। এবং তিনি দেখতে পান একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ঐ যাত্রী ছাউনির নিচে ছোট পরিসরের একটি সবজির দোকান নিয়ে বসে আছেন। সেই দৃশ্যটি দেখে তিনি সেই দোকানে যানন এবং তিনি দেখেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হলেও তিনি মানুষ জনকে সঠিক ভাবে ওজন করে জিনিস-পত্র দিচ্ছেন ও হিসাব করে সঠিকভাবেই টাকাও ফেরৎ দিচ্ছেন। বিষয়টি দেখে তিনি তার কাছে যান ও তার সাথে আলাপ করেন। তার সাথে কথা বলার পর তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবু সাঈদকে তার ঐ ব্যবসার আরও উন্নয়ন কওে দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মঙ্গলবার আবু সাঈদকে নগদ টাকা, ক্যাশবাক্স, দাঁড়িপাল্লা ও বাটকারাসহ বিভিন্ন সবজি কিনে দোকান সাজিয়ে দেন। এবং এলাকাবাসীকে অনুরোধ করে বলেন তার দোকান থেকে সবজি কেনার জন্য।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আবু সাঈদ বলেন, এক সময় আইসক্রিমের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। তারপর ভ্যান চালিয়ে বেকারির বিস্কিট ও রুটি বিক্রি করি যা ছিল খুবই কষ্টকর। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি দিন দিন কমে আসায় ভ্যান চালানো ছেড়ে দিয়ে স্বল্প পুঁজি নিয়ে সবজির ব্যবসা শুরু করি। এলাকাবাসী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। কিন্তু আজ ইউএনও স্যার আমার দোকানটাকে সাজিয়ে দিয়েছে তাই আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ঐ গ্রমে বসবাসকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদ একজন খুব দরিদ্র ব্যক্তি। খুব কষ্ট করে তিনি তার পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও সে কখনো ভিক্ষা করে পরিবার পরিজননিয়ে খেতে চাননা। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। সে খুব ভাল ছেলে। শুধু শাসনিক কর্মকতা নয়, এলাকায় অনেক বিত্তবান ব্যক্তি আছেন যে তারা চাইলেই অসহায়দের সহযোগিতা করে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহির বলেন, উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবু সাঈদকে একটি সবজির দোকান করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সমাজসেবা অফিস থেকে তাঁকে আরোও আগেই একটি প্রতিবন্ধী ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। তার গর্ভবতী স্ত্রীর জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া ও উন্নত বাসস্থানের জন্য পরবর্তীতে আবু সাঈদকে একটি ঘর উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তারিকুল ইসলাম, নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ মো. শফি উদ্দিন, কোলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপন।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়