বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৪ ১৪৩১ ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮
প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই! প্রযুক্তির কল্যাণে যেমন মানুষের জীবন সহজ থেকে সহজতর হচ্ছে তেমনি মানুষ প্রতিনিয়তই আরো বেশি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তিবিহীন জীবন এখন অনেকের পক্ষে কল্পনা করাই সম্ভব নয়।আর যদি বলা হয় বর্তমান প্রযুক্তির প্রায় ৮৫ ভাগ শুধুমাত্র একটি ৩০০ বর্গমাইলের অঞ্চল থেকে এসেছে তবে তা কি বিশ্বাসযোগ্য হবে? হ্যাঁ, বর্তমানে যে সকল প্রযুক্তি ব্যবহারে মানবজাতি অভ্যস্ত তার বেশিরভাগেরই উন্নয়ন হয়েছে সিলিকন ভ্যালিতে।
ইন্টারনেট থেকে শুরু করে শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর অথবা বিশাল অবুঝ কম্পিউটার থেকে আমাদের টেবিলের পার্সোনাল কম্পিউটারে রুপান্তর সবকিছু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালোফোর্নিয়া স্টেটের স্যানহেস এবং স্যান ফ্রান্সিস্কো এর মধ্যবর্তী ছোট শহর সিলিকন ভ্যালিতে। এমনকি বর্তমান টেক জায়ান্ট গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপেল, আমাজন আরো অনেক কোম্পানির শুরুটাও এই সিলিকন ভ্যালিতেই হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০০ বর্গমাইলের এই অঞ্চলের উপর দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৩ ত্রিলিয়ন ডলার এর টেক ইন্ডাস্ট্রি। যা প্রযুক্তি প্রেমীদের স্বর্গ বা পৃথিবীর প্রযুক্তি রাজধানী হিসেবেও পরিচিত। তো কীভাবে সূত্রপাত হল এই সিলিকন ভ্যালির? আর কীভাবেই বা একটি ছোট শহর নিয়ন্ত্রন করছে পুরো পৃথিবীর প্রযুক্তি?
সিলিকন ভ্যালি এর শুরু হয়েছিল আধুনিক সব প্রযুক্তি আবিষ্কারের অনেক পূর্বেই। আঠারোশ শতক থেকেই স্যান ফ্রান্সিস্কো আমেরিকার টেলিগ্রাফ এবং রেডিও ইন্ডাস্ট্রী এর নেতৃত্ব দিয়েছিল। এমনকি মার্কিন প্রথম রেডিও স্টেশনও স্যান ফ্রান্সিস্কো তীরবর্তী স্যান জোসে শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে মার্কিন ন্যাভি মফেট ফিল্ড নামে একটি জায়গায় তাদের নতুন সব উড়োজাহাজ পরীক্ষার জন্য ব্যবহার শুরু করল।পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হল এইমস ল্যাবরেটারি। ফলে স্যান হেস এবং স্যান ফ্রান্সিস্কোর মধ্যবর্তী স্থান হয়ে উঠল অনেক ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষকদের আবাসস্থল।একই বছর নিকটবর্তী পাউল অল্টোতে প্রতিষ্ঠিত হল হিউলেট প্যাক্টার্ড। যা তখন অসিলিওস্কোপ তৈরি করত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাডার এবং আর্টিলারি তৈরি করেছিল।
এই হিউলেট পাকার্ডই পরবর্তীতে পৃথিবীর অন্যতম বড় কম্পিউটার তৈরির প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। যা এইচপি নামে পরিচিত। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেল ল্যাবরেটরি। এই বেল ল্যাবরেটরিই রুপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় বর্তমান মাইক্রোপ্রসেসর এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান ইন্টেল এ। বেল ল্যাবরেটরির একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন উইলিয়াম শকলি তিনি বেল ল্যাবরেটরিতে চাকরি ছেড়ে সিলিকন ভ্যালি এর তীরবর্তী মাউন্টেন ভিউতে শকলি সেমিকন্ডাকটর ল্যাব তৈরি করেন। তিনিই প্রথম সেমিকন্ডাকটর তৈরিতে জার্মেনিয়ামের বদলে সিলিকন ব্যবহার শুরু করেছিল। যা বাড়িয়ে দিয়েছিল কার্যক্ষমতা।
সেমিকন্ডাকটর হল বর্তমান যুগের প্রসেসর। শকলি খরচ কমাতে স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির আন্ডার গ্রাজুয়েটদেরকে নিজের ল্যাবে চাকরি দেয়। এদের ভিতর আট জন শকলি ল্যাব ত্যাগ করে এবং ফেয়ারচাইল্ডের সঙ্গে কাজ শুরু করে।এদেরকে আট বিশ্বাসঘাতক বলা হয়। মার্কিন চন্দ্রাভিজানে ব্যবহৃত বেশিরভাগ প্রসেসরই ফেয়ারচাইল্ড ল্যাব সরবারহ করে।পরবর্তীতে এই আটজনই ফেয়ারচাইল্ড ল্যাব ত্যাগ করে এবং এ এম ডি, এনভিডিয়া এবং জেরক্স এর মত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এভাবেই এই অঞ্চলে প্রযুক্তি উদ্দভাবক কোম্পানি তৈরি হতে থাকে। কিন্তু কীভাবে বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত এতগুলো প্রতিষ্ঠান একত্রে সিলিকন ভ্যালি নাম পেল?
ষাটের দশক পার করতে না করতেই স্যান ফ্রান্সিস্কো এবং স্যান জোসে এর মধ্যবর্তী এই স্থানটি কম্পিউটার ও আধুনিক প্রযুক্তি পণ্যের কেন্দ্রে পরিণত হতে শুরু করে।১৯৭১ সালে ডন হোফলের নামের এক জার্নালিস্ট মার্কিন কম্পিউটার ইন্ডাষ্ট্রি তথা ক্যালোফোর্নিয়ার এই স্থান সম্পর্কে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে যা “সিলিকন ভ্যালি ইউএসএ” শিরোনামে প্রকাশ পায়। নামটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে, পরবর্তীতে ৩০০ বর্গমাইলের এই প্রযুক্তি স্বর্গ সিলিকন ভ্যালি নামেই পরিচিত হয়। ৭০ এর দশকে সিলিকন ভ্যালিতে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান শুরু হয়।যার মধ্য অন্যতম হল অ্যাপল এবং ওরাকল। যারা তৎকালীন কম্পিউটার ইন্ডাসট্রীকে পুরোপুরি বদলে নতুন করে সাজায়।
অপরদিকে জেরক্স কাজ করতে থাকে ইথারনেট নিয়ে। যার বদৌলতে বর্তমান দুনিয়া ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করছে। এভাবে মোটামুটি ৮০ এর দশকের মধ্যেই সিলিকন ভ্যালি নিজের স্বকীয়তার জানান দেয় এবং ৯০ এর দশকে সিলিকন ভ্যালিতেই প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে গুগল, ইয়াহু, আমাজন, ইবে এবং পে পাল এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো। যা বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ২০০০ সালের পরে সিলিকন ভ্যালিতে স্থান পায় ফেসবুক, টুইটার, টেসলা এর মত কোম্পানিগুলো। বর্তমানে সিলিকন ভ্যালিতে প্রায় চার হাজার স্টার্টআপ রয়েছে যা প্রতিনয়তই বর্তমান পৃথিবীর সমস্যা সমাধানে এবং পৃথিবী বদলানো সব প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়