শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৭ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
শফিক ছোটন, নওগাঁ
প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০১৯
প্রবীন নিবাস ‘বেলা শেষে’। অবহেলিত প্রবীন নারীদের জন্য এই নিবাস গড়ে তুলেছেন নওগাঁর নারী উদ্যোক্তা তছলিমা ফেদৌস। সমাজ ও পরিবারে অবহেলিত প্রবীণ নারীদের এখানে এনে খাবার দেন ও পরিচর্যা করেন তিনি।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবসে সন্ধ্যায় নিবাসের বারান্দায় বসে মায়েরা যখন খাবারের অপেক্ষা করছিলেন, তখন হঠাৎই সেখানে হাজির নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ। সাথে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নবির উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক নাছিমুল হক বুলবুল।
ডিসির আগমনে খানিকটা জড়ো সড়ো হয়ে বসলেন বৃদ্ধ মায়েরা। আঁচল টেনে মুখ ঢাকলেন অনেকে। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তসলিমা ফেরদৌস। জেলা প্রশাসক ভালমন্দ জিজ্ঞাসা দিয়ে কথা শুরু করতেই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেলেন বৃদ্ধ মায়েরা। পরিচয় দিয়ে নিজে থেকেই মাটিতে পাতানো বিছানায় মায়েদের পাশে বসে পড়লেন ডিসি। শুরু হলো খোঁজ খবর নেয়ার পালা। পরিচয় পেয়ে বৃদ্ধা রেজিয়ার চোখের কোনে জল ছলচল করছিলো। অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লেন। মনের অব্যাক্ত কথাগুলো খুলে বললেন।
পাশের গ্রামের আমিনা খাতুন জানালেন- বয়স সত্তরের কাছাকাছি। ১ মেয়ে ছিলো বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি চলে গেছে। আমিনার স্বামী মারা যাওয়ার পর বড় একা হয়ে পড়েন। অভাব অনটনে খেয়ে না খেয়ে কেটেছে বেশ কয়েক বছর। অবশেষে ঠাঁই মিলেছে ‘বেলা শেষে’ প্রবীণ নিবাসে। মাঝে মধ্যে স্বামীর ভিটামাটি দেখতে যান; আবার চলে আসনে।
জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন আমিনা, খোতেজা, তছুআরা, আবিজান, সফিনা বেওয়াসহ সকলেই। বৃদ্ধাদের কথায় উঠে আসে অবহেলা বঞ্চনা দু:খ কষ্টের হৃদয় বিদারক একেকটি গল্প। তাদের অতীত কষ্টের কথায় আবেগ আপ্লুত হলেন জেলা প্রশাসকও। একে একে সকলের সাথে কথা বলে খোঁজ খবর নিলেন। এখানে কে কোন ঘরে, কোন বিছানায় থাকেন। কি খাওয়া হয় এমন এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজ নিলেন।
জেলা প্রশাসক আর বৃদ্ধাদের আলাপচারিতা যেন শেষ হচ্ছে না। এরইমধ্যে রাতের খাবার চলে এলো। তছলিমা তার অপর এক সহযোগীকে নিয়ে খাবার পরিবেশন করলেন। তিনি আগে থেকেই রান্না করে রেখে ছিলেন। এক সারিতে বসে খাবার খেলন জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ। সবাইকে মিষ্টি মুখ করালেন ডিসি। খাওয়া শেষ হলো। যেন আলাপ চারিতা যেন শেষ হলোনা। প্রবীণদের জন্য কিছু সু-ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেন জেলা প্রশাসক।
প্রবীন নিবাসের অধিবাসীদের কাছে সাধারনত বছরেও কেউ খোঁজ নিতে আসে না। চাপা কান্না জমা থাকে অসহায় বৃদ্ধদের হৃদয় জুড়ে। এমন দিনে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশিদ ছুটে এসে আপন করে নিলেন। কাছে বসে সম্মান আর পরম মমতায় খানিকটা গল্প-আড্ডায় স্মৃতি কাতর করলেন। তাঁর উদারতা, মহানুভবতা ভালবাসায় শিক্ত হলেন নিসাবের অধিবাসিরা।
বেলা শেষে’র উদ্যোক্তা তছলিমা ফেরদৌস জানান, নওগাঁ শহরে আড্ডায় কফি নামে একটি রেষ্টুরেন্ট আছে তার। সেখানকার আর্থিক সহায়তায় চলে ‘বেলা শেষে’। প্রবীণ মায়েরা যাতে অবহেলায় কোথাও পড়ে না থাকে সেজন্য তিনি গড়ে তুলেছেন বেলা শেষে প্রবীন নীবাস।
জেলা প্রশাসক জানালেন- জেলায় প্রবীণ দিবসের অনেক কর্মসূচী ছিলো। এর মাঝেও ভুলে যাননি প্রবীণ মায়েদের কথা। নিজের তাগিদ থেকেই ছুটে যান বেলা শেষে প্রবীন নিবাসে। শুধু প্রবীন দিবসে নয় প্রতিটি মুহুর্তে অগ্রজদের প্রতি সম্মান যথাযথ মর্যাদা ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়