শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০১৮
জন্মের পর থেকেই তার কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অনেকটা অবশ। দুটি পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা সরু। ডান পায়ের পাতা পেছন দিকে বাঁকা। বা পায়ের পাতায় প্রয়োজনীয় হাড় নেই। পায়ে শক্তি পায় না বলে দাঁড়াতে ও হাঁটাচলা করতে পারে না সে। কিন্তু এরপর ও থেমে নেই তার লেখাপড়া। জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে।
সে দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় হাসান পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষা শুরু আগে তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় অদম্য ইচ্ছার কথা। শারীরিক এ প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি এ অদম্য ক্ষুদে শিক্ষার্থীকে। সব বাধা জয় করে সে পড়ালেখা চালিয়ে গেছে। তার মনে বিন্দু মাত্রও কোনো হতাশার ছাপ নেই। বড় হয়ে সে একজন শিক্ষক হতে চায়।
রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এসএস দ্বারা নির্মিত একটি ছোট ব্যাটারি চালিত রিকশায় বসে আছে হৃদয়। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা। বিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী তাকে নামাতে এগিয়ে আসছেন। ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা নিজেই চালিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসায় সব পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নজর কেড়েছে।
হৃদয় হাসান বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই তার শারীরিক এ সমস্যা দেখা দেয়। পায়ে ভর দিয়ে হাঁটা যেতো না। ছোট বেলায় হামাগুড়িয়ে দিয়ে স্কুলে যেতাম। একটু বড় হওয়ার পর হুইল চেয়ারে বসে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হতো। দুই বছর আগে পরিবারের লোকজন তার জন্য একটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা কিনে দেয়। এরপর থেকে সে নিজেই রিকশা চালিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতো। এ সময় কথা হয় হৃদয়ের সঙ্গে। ছোট বেলায় হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে যেত। এখন অটো রিকশা চালিয়ে চলাফেরা করে। সে নিজেই রিকশা চালাতে পারে। রিকশা চালাতে তার সমস্যা হয়। মাঝে মাঝে দূরে গেলে তার চাচাতো ভাইয়েরা তাকে সহযোগিতা করে।
হৃদয় জানায়, প্রথম দুটি পরীক্ষা ভাল হয়েছে। বড় হয়ে সে একজন শিক্ষক হতে চায়। সে জানায় এ সমস্যা আর আমার কাছে সমস্যা মনে হয় না। পড়াশুনা করতে খুবই ভাল লাগে। আমি পড়াশুনা করতে চায়।
দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, কয়েক বছর আগে হৃদয়ের জন্য ইউএনও অফিস থেকে একটি হুইল চেয়ার এনে দিয়েছিলাম। ওটা দিয়ে সে স্কুলে আসতো। এখন অটোরিকশা দিয়ে চলাচল করে।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়