বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১০ ১৪৩১ ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯
সম্প্রতি শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয় কংগ্রেসের। গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) প্রকাশিত ফলাফলে বিপুল বিজয় পায় নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। ওই দিনই দলের সভাপতির পদ রাহুল গান্ধী ছেড়ে দিচ্ছেন বলে কথা শোনা যায়। পরে গত শনিবার বৈঠকে বসে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি।
সেখানেও নিজের পদত্যাগের ইচ্ছের কথা জানান তিনি। ওই পদে মা সোনিয়া গান্ধী বা বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম বিবেচনায় না নেওয়ার অনুরোধ করেন রাহুল। পরাজয়ে বিধ্বস্ত কংগ্রেস রাহুলের এ মন্তব্যে বড় ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়ে। তবে ওই সভায় তাকে আপাতত পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করেন কংগ্রেস নেতারা।
এছাড়া কংগ্রেসের কোনো নেতাই চাচ্ছেন না, দলের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করুন রাহুল গান্ধী। তারপরও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রাহুল। এ পরিস্থিতিতে কংগ্রেস চলতি সপ্তাহে আবার বৈঠক বসছে। বৈঠকে ভারতের প্রাচীন এই দলের সম্ভাব্য সভাপতির বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়।
রাহুল ঘনিষ্ঠরা বলছেন, পদত্যাগের মাধ্যমে তিনি মূলত দলকে একটা শিক্ষা দিতে চান। যদিও এ পদত্যাগের মধ্যদিয়ে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাহুল চান, গান্ধী পরিবার ছাড়া যে কংগ্রেস অচল- এটা দলের সিনিয়র নেতারা বুঝুক। তার পদত্যাগের পর দল যখন ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়বে ঠিক তখনই তারা উপলব্ধি করতে বাধ্য হবে, দলে একজন গান্ধীর কতটা প্রয়োজন। তাই নিজের নাক কেটে হলেও দলকে এই শিক্ষাটাই দিতে চান রাহুল। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত দলের বাইরে থেকে যেভাবে দলকে শিক্ষা দিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী।
কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে থেকেছেন নেহেরু-ইন্দিরা পরিবারের সদস্যরা। ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর দলের প্রধানের পদ থেকে নেহেরু-গান্ধী পরিবারকে বাইরে রাখতে একজোট হন দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা। সভাপতি হন সীতারাম কেশরী। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে দলটির অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে যায়। এ সময় বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার অনুরোধে দলটির হাল ধরেন সোনিয়া গান্ধী।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে পরাজিত হয় কংগ্রেস। এরপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের সভাপতি হন রাহুল গান্ধী। কিন্তু পরাজয়ের সেই ধারাবাহিকতা এবারও বহাল রইল। এর পরই দলের সভাপতির পদ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান রাহুল। তবে সোনিয়া-তনয় জানিয়েছেন, একজন ভালো উত্তরসূরি বেছে নেয়ার জন্য তিনি দলকে সময় দেবেন। আর সুশৃঙ্খল সৈনিক হিসেবে তিনি দলের জন্য কাজ করে যাবেন।
তার এ পদত্যাগের সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের একাংশ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, এবার লোকসভায় একরকম একাই লড়েছেন রাহুল। ক্ষমতাসীন শক্তিশালী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে তিনি যেসব নির্বাচনী ইস্যু তৈরি করেছিলেন, ওই সব ইস্যু নিয়ে মোটেও কাজ করেননি দলের কিছু স্বার্থান্বেষী নেতা। কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারকে ৭২ হাজার রুপি করে দেয়ার লক্ষ্যে ন্যায় প্রকল্পর কথা বলা হয়। দলের কোনো নেতাই এ নিয়ে কোনো সভা-সমাবেশে একটি কথাও বলেননি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও একটা পোস্ট করেননি।
এছাড়া রাহুল যখন রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে সোচ্চার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী অনিল আম্বানি পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ভয়ে কথা বলতে বিরত ছিলেন অনেক নেতাই। এর বাইরে দলের স্বার্থ বাদ দিয়ে নিজেদের ছেলেদের প্রার্থী করেছেন অনেকেই। দলের বেশ কয়েকজন এমন স্বার্থান্বেষী নেতার কর্মকাণ্ডে অতিশয় ক্ষুব্ধ রাহুল।
কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে বলেন, রাহুল এই পরাজয়কে ব্যক্তিগতভাবেই নিয়েছেন। তবে এটি ব্যক্তির বিষয় নয় মোটেও। কংগ্রেসকে নেহেরু-ইন্দিরা পরিবারের বলয় থেকে মুক্ত করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপিও অনেকবার কথা বলেছে।
এবারের লোকসভায় ৫২টি আসন পায় কংগ্রেস। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৪টি আসন পায় দলটি।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়