শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১২ ১৪৩১ ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় একটি নার্সারীর প্রায় ৫০০ বড় গাছ এবং দুই হাজারের অধিক চারাগাছ কেটে জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্থ নার্সারী মালিক তৈয়বুর রহমানের অভিযোগ, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর নার্সারী থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়ে গেছে।
ওই এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসী, পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৈয়বুর রহমানের বাবা পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার বাসিন্দা মৃত মফিজ উদ্দিন একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি জীবন দশায় তাঁর ছেলে ও দুই মেয়ের নামে বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করে যান। নজিপুর পৌরসভার পুঁইয়া মৌজায় তৈয়বুর রহমান ও তাঁর অন্য ভাই-বোনদের নামে ক্রয় করা ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। পিতার অনুমতি নিয়ে ২৫-৩০ বছর আগে ওই জমিতে নার্সারী (সোনালী নার্সারী) ও মাছ চাষ শুরু করেন তৈয়বুর রহমান। নার্সারী করে সফলতা অর্জন করায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরষ্কারও অর্জন করেছেন তিনি। গত ১৯ মার্চ তৈয়বুর রহমানের ছোট ভাই জয়নাল আবেদিন (জিনু), রফিকুল ইসলাম (লিটন) ও জাহাঙ্গীর আলমের (সেলিম) নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী ওই নার্সারী দখল করে নেয় এবং সেখানে লাগানো বড় গাছ ও চারা গাছ কাটতে শুরু করে। এ সময় তৈয়বুর রহমান প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে তাঁকে হত্যার উদ্দেশে ধাওয়া করে। পরে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচান। প্রায় ১৫-২০ দিন ধরে প্রায় ১৫ লাখ টাকার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে ওই নার্সারী থেকে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে গেলে গাছ কাটা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে থানা পুলিশ তৈয়বুরকে এ বিষয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে গত ১১ এপ্রিল তৈয়বুর রহমান নওগাঁ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলার অভিযোগ করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে পত্নীতলা থানা পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন আদালত। আগামী ২৭ জুনের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই জায়গায় কেটে নেওয়া গাছগুলির গোড়া পড়ে আছে। কাটা থেকে রেহাই পায়নি চার গাছগুলোও। সেখানে মাছ চাষের জন্য তৈরি করা পুকুরগুলোতে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।
নার্সারীর মালিক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমার বাবা জীবনদ্দশায় আমাদের ভাই-বোনদের নামে ওই ১৮ বিঘা জমি ক্রয় করে যান। সেখানে আমার নামে ১০৫ শতাংশ জমি (প্রায় সাড়ে তিন বিঘা) জমি রয়েছে। নার্সারী করার সুবিধার্তে পিতার অনুমতি নিয়ে অন্য জায়গায় আমার মালিকানাধীন জমি অন্য ভাই-বোনদের বুঝে দিয়ে ২৫-৩০ বছর আগে এখানে নার্সারী গড়ে তুলি। এত দিন কোনো বিরোধ না থাকলেও প্রায় দেড় মাস আগে কোনো আপোস-মিমাংসার সুযোগ না দিয়ে জোর করে আমার নার্সারীর গাছগুলো কেটে ফেলে জমি দখল করে নেয় আমার ছোট ভাই জয়নাল, রফিকুল ও জাহাঙ্গীর।’
তিনি বলেন, ‘এলাকার কিছু সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় জোর করে তাঁরা জমি দখল করে নিয়েছে। এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করার জন্য তাঁরা প্রতিনিয়ত আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘সেখানে মাত্র ১০৫ শতাংশ জমির মালিক বড় ভাই তৈয়বুর রহমান। অথচ এতদিন তিনি জোর করে সেই জমি ভোগ-দখল করে খাচ্ছিলেন। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মাতব্বরদের উপস্থিতিতে বৈঠক করে এবং জমি পরিমাপ করে তৈয়বুরকে তাঁর ভাগ বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের অংশে যেসব গাছ পড়েছিল আমরা সেই গাছগুলো কেটে নিয়েছি।’
নার্সারীর জায়গায় মালিকানাধীন জমি তৈয়বুরকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে অন্য জায়গায় তৈয়বুরের জমি অন্য ভাই-বোনেরা ভোগ করছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরণের কোনো শর্ত হয়নি। আমরা তাঁর কোনো জমিই ভোগদখল করছি না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পত্নীতলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম বলেন, নার্সারীর ওই জমি নিয়ে ভাইদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এ বিষয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিদেবন জমা দেওয়া হবে।
স/সা
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়