শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২২
নুসরাতের আর কেউই রইল না। মা ও ছোটবোনের পর এবার চলে গেলেন বাবাও। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের আমান কোল্ড স্টোরেজ এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তার মা মোকছিতুন্নাহার বিথি (৩০) ও বোন মরিয়ম জান্নাতের (৪) মৃত্যু হয়।
এরপর বাবা আকতার হোসেন বাবলুকে (৪০) উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকালে তারও মৃত্যু হয়।
নিহত আকতার হোসেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোকবুল মোহরীর ছেলে। এছাড়া ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন মান্দা উপজেলার আব্দুল মান্নান (৪৮)। তিনি কসুম্বা ইউনিয়নের ছোট বেলালদহ গ্রামের মৃত ময়েজ উদ্দীন মন্ডলের ছেলে।
জানা যায়, স্ত্রী বিথি খাতুনের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সকালে স্ত্রী ও শিশু সন্তান মরিয়ময়মকে নিয়ে একই মোটরসাইকেলে করে রওনা হন আকতার। পথিমধ্যে আমান কোল্ডস্টোরের কাছে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে সড়কে ছিটকে পড়েন তারা। এ সময় পেছন দিক থেকে একটি দ্রুতগামী ট্রাক তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন বিথি ও তার শিশু মরিয়ম জান্নাত ও অপর মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল মান্নান।
এ সময় স্থানীয়রা ছুটে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় আকতার হোসেন বাবলুকে উদ্ধার করে রাজশহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনিও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একই পরিবারে বাবা, মা ও শিশু সন্তানের মৃত্যুর সংবাদে নিয়ামতপুরের চন্ডীপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ওবাইদুল হক।
জানা যায়, ঘটনাস্থলে মা-মেয়ে মারা গেলেও জীবিত ভেবে তাদেরও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের শরীর পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বড় মেয়ে নুসরাত। হাসপাতালে মা ও বোনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। হাসপাতালের বেডে আহত বাবাকে দেখার পর বাবাকে রেখে মা ও বোনের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরেন তারা। ফেরার পথে আবার সংবাদ আসে বাবার মৃত্যুর।
এমন সংবাদে মূর্ছা যায় বড় মেয়ে নুসরাত। তার কান্নায় ভারি হয়ে উঠে পথ। আহাজারির সুরে সে বলতে থাকে, কে আমাকে স্কুল নিয়ে যাবে, কে খাইয়ে দিবে। কে আমাকে আপা বলে ডাকবে এমন প্রলাপ বকতে বকতে লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সেই জ্ঞান হারায় ও বারবার মূর্ছা যায় নুসরাত।
প্রথমে মা-মেয়ের লাশ ও পরে বাবার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। দূর থেকেও ছুটে আসে পাড়া-পড়শী ও এলাকাবাসী। নুসরাত ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে সেখানকার আকাশ-বাতাশ।
নিহত আকতারের চাচাতো ভাই মাহমুদ্দুনবী জানান, সকালে বড় মেয়ে বামইন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাতকে বাসায় রেখে ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মোটরসাইকেলে করে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হন আকতার। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তারা।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়