বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২১
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে অবস্থিত ‘ভাঙা মসজিদ’। উপজেলা থেকে মসজিদটির দূরুত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। প্রাচীন ঐতিহ্যের ছাপ দেদীপ্যমান মসজিদটির পরতে পরতে। নান্দনিক নকশা ও সুনিপুণ নির্মাণকাজ জানান দেয় মুসলিম ইতিহাসের নান্দনিকতার কথা।
এত সুন্দর ও সুদর্শন একটি মসজিদ এবং শৈল্পিক অবকাঠামো রয়েছে তা অনেকের অজানা। এর গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও অনন্য। চারটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে ৯ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। একটি দরজা রয়েছে। দ্বিতল ভবনের ভেতরে মেহরাব ও দেয়ালে অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানি ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনি চার ফুট প্রস্থ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা।
প্রাচীন স্থাপত্যকলার সুদৃশ্য মসজিদটি চিকন ইট, চুন সুরকির নির্মিত দেয়ালে এখনো নকশা করা কারুকাজ রয়েছে। এর আয়তনের সঠিক তথ্য জানা যায় নাই। মসজিদটি সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজ ঘর তিনটি অংশে বিভক্ত। বিভিন্ন তথ্য মিলিয়ে মসজিদটির সম্ভাব্য বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০-৫০০ বছর।
কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় ঐতিহ্য ও গর্বের এই মসজিদ আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করেছে। দেয়ালে গাছপালা জেগে উঠেছে, দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাঁটল। নামাজ পড়ার অনুপোযুক্ত হওয়ার কারণে একই স্থানে এলাকাবাসীর উদ্যোগে আরও একটি মসজিদ স্থাপন করার।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, কোনো এক সময় প্রাচীন মসজিদটির আশপাশে মুসলিম ঘন জনবসতি ছিল। মসজিদের পাশে বিশাল পুকুর থাকার কারণে এখানে প্রাচীন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আবার কি কারণে তারা মসজিটির আশপাশ এলাকার ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য আজও কেউ বলতে পারেননি।
স্থানীয় বয়জেষ্ঠ্য আনিছুর রহমান বলেন, গত ২০ বছর আগেও মসজিদটি অনেক সুন্দর ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মসজিদটি দেখতে আসতেন। এখানে শুধু দুই ঈদের নামাজ হত। শেষ ঈদের জামাত ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত হয়।
বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনেছি ১৯২০ সালে ভূমিকম্পে ৯টি গম্বুজসহ মসজিদটির কিছু অংশ ভেঙে যায়। তারপর থেকেই ভাঙা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটির একটি দরজার ওপর মূল্যবান কষ্টি পাথরে খোদাই করে আরবি ভাষায় কোরআনের সুরা লেখা ছিল। মূল্যবান পাথরটি ৩০/৩৫ বছর আগে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যান।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা তাইজ উদ্দিন বলেন, গত বছর সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কিছু লোক এসে গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছিল। তারপর আজ পর্যন্ত তাদের আর কোনো খোঁজ-খবর নেই। এই মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি। মসজিদটি পুনরায় সংস্কার করলে গ্রামবাসীর ভালোই হয়। পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যও রক্ষা পায়।
নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া জয়া পেরেরা বলেন, মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে গ্রামবাসীর স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠিয়েছি। শিগগিরই এই মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়