শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ জুন ২০২২
গ্রামের নাম চক-চান্দিরা। খুব অল্প সংখ্যক মানুষের বসবাস এখানে। শুনতে রূপকথার গল্প মনে হলেও ছোট্ট এই গ্রামের শরীর জুড়ে ছড়িয়ে আছে ৩৬৫টি পুকুর। যা গ্রামের সৌন্দর্যকে বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
গ্রামের অবস্থান নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাটের ইসবপুর ইউনিয়নে। আকাশমুনি, ইউক্লিপটাসহ বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছের মাঝে-মাঝেই দেখা মিলবে বড়-ছোট পুকুরগুলো। আর তার কেন্দ্রেই রয়েছে ছোট্ট এই গ্রাম।
মজার বিষয় হচ্ছে এই গ্রাম তথা ৩৬৫টি পুকুর ঘিরে একটি গল্পের প্রচলন রয়েছে। বলা হয়- অষ্টম শতাব্দীর দিকে পাল বংশের একজন রাজার বসবাস ছিলো এই এলাকায়। রাজরানীকে নিয়ে বেশ সুখেই দিন কাটছিল রাজার। কিন্তু সে সুখ আর বেশিদিন সহিল না। হঠাৎই অজানা অসুখে পড়লেন রানী। কিছুতেই সে অসুখ আর ভালো হয় না। দিনে দিনে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে তার। রানীর এমন অসুখে সুখ হারাল রাজ্য থেকেই।
এবার রানীর অসুখ সারাতে রাজ্যজুড়ে এলান করা হলো। রাজসভা আহবান করে ডাকা হলো হেকিম, বৈদ্যদের। সভায় উপস্থিত হয়ে এক হেকিম জানালেন, রানীর অসুখের ধরন বেশ কঠিন। সারতে হলে রাজাকে ৩৬৫টা পুকুর খনন করতে হবে। আর বছরের এক এক দিন রানীকে গোসল করতে হবে এক একটি পুকুরে। বছরের ৩৬৫ দিন ওই ৩৬৫ পুকুরে গোসল করলেই কেবল রোগমুক্ত হবেন রানী। রাজা তার প্রিয়তমার সুখের জন্য তাই করলেন। রাজ্যজুড়ে খনন করলেন ৩৬৫টি পুকুর।
তবে এমন গল্পের সত্যতা জানতে কথা বলা হয়েছে ইতিহাস গবেষকদের সাথে। রাজশাহীর ইতিহাস গবেষক মাহবুব সিদ্দিক জানান, ‘প্রাচীনকাল থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংকট ছিলো। সেই পানি সংকট দূর করে সেচ সহায়ক হিসেবে রাজা রামপালসহ বেশ কয়েকজন রাজা এসব পুকুর খনন করেছিলেন। রাজ শাসন বিলুপ্ত হবার পর এসব পুকুর খাসকরণ করা হয় বলেও জানান তিনি’।
প্রত্নতত্ত্ব সংশ্লিষ্টরাও কথা বলেছেন কিছুটা একই সুরে।
নওগাঁ ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের তত্বাবধায়ক ফজলুল করিম জানান, ‘একটা সময় হয়তো এখানে বেশ ঘন বসতি ছিলো। কৃষি সয়াহক হিসেবেই হয়তো পুকুরগুলো খনন করা হয়ে থাকতে পারে। তবে গভীর অনুসন্ধানেই সম্ভব এসব বিষয় নিশ্চিত করে কথা বলা’।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়