শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৭ ১৪৩১ ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৮ জানুয়ারি ২০২০
অধিক লাভজনক হওয়ায় ধান ছেড়ে বেগুন চাষে ঝুঁকছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের কৃষকরা। বেগুন চাষ করে একদিকে তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে দেশের সবজির চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন, রাইগাঁ ইউনিয়ন, চেরাগপুর ইউনিয়ন ও এনায়েতপুর ইউনিয়নের কৃষকরা গত দুই বছর ধরে বোরো মৌসুমে জমিতে বোরো চাষ না করে বেগুন চাষ করছেন। অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই ৫ কাঠা থেকে সর্বোচ্চ দুই বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় মাঠে মাঠে এখন কেবল বেগুনের সমারোহ। কৃষকরা যশোরের ইসলামপুরী এবং সাদা গুটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন।
উপজেলার নাটশাল গ্রামের হানিফ ২৫ কাঠা জমি ১৫ হাজার টাকায় ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে গত দুই বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন। বেগুন চাষে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। ফটিকপুর গ্রামের নওশাদ আলী তার নিজস্ব এক বিঘা জমিতে বেগুনের ক্ষেত করেছেন। গোপালপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন তার ১০ কাঠা জমিতে এবং নাটশাল গ্রামের একরামুল হক ১৫ কাঠা জমিতে বেগুনের চাষ করে এখন লাভের প্রত্যাশায় রয়েছেন।
চাষীরা জানান, বেগুন চাষে বোরো আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামূলকভাবে বাজারে মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলে সব মিলিয়ে প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ পড়ে। ধান পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ মণ। প্রতি মণ ৫শ টাকা হিসেবে উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কৃষকের ঘরে লাভ কিছুই আসে না।
অপরদিকে তাদের বিবরণ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা খরচ পড়ে। সেখানে পুরো সৌসুমে তারা প্রায় দেড়শ’ মণ বেগুন পান। বর্তমান বাজার অনুযায়ী গড়ে প্রতিমণ বেগুন পাইকারী দরে ৭শ’ টাকা বিক্রি করছেন। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা ১ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। তারা জানান, আমনের আবাদ ঘরে তোলার পর বোরো চাষের চিন্তা না করে তারা বেগুন চাষের জন্য জমি প্রস্তুত শুরু করেন। বেগুন চাষের পর আবার তারা আমন চাষের প্রতি মনযোগ দেন।
এ ক্ষেত্রে কৃষকদের দুটি লাভ হয়। জমিতে চাষ কম দিতে হয়। আবার বেগুন চাষে জমিতে যে সার ব্যবহার করতে হয় পরবর্তীতে সেই সারের প্রভাব আমন ফসলে পড়ে।
আরও জানা যায়, বেগুন বিক্রি করতে কখনো কৃষকদের হাটে বাজারে যেতে হয় না। পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। এতে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন।
পাইকারী ক্রেতারা জানান, এখান থেকে বেগুন নিয়ে তারা জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ের বাজার ছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন।
এ বিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ অরুন চন্দ্র দেবনাথ জানান, এ বছর উপজেলায় মোট ৪২০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ হয়েছে। গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩শ’ হেক্টর। আমন ধানের ফসল তোলার পর অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে বেগুনের চারা রোপণ করতে হয়। চৈত্র মাসের শেষ দিকে গাছে বেগুন ধরতে শুরু করে। বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এই ৩ মাস ক্ষেত থেকে বেগুন তুলে বিক্রি করা হয়। বেগুন চাষে পানি কম লাগে। একদিকে উৎপাদন খরচ কম অন্যদিকে ভালো বাজার মূল্য কৃষকদের বেগুন চাষে উৎসাহিত করে তুলছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
স/এমএস
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়