মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ৫ ১৪৩০ ০৯ রমজান ১৪৪৫
প্রকাশিত: ৭ জানুয়ারি ২০১৯
অস্টিওপরেসিসের কারণে প্রতি ৩ সেকেন্ডে একজন পঞ্চাশোর্ধ মহিলা হাত, পা অথবা হিপের ফ্র্যাকচারের শিকার হন। রোগটির শিকার না হতে চাইলে বেড়ে ওঠার বয়স পর্যন্ত (শিশুদের জন্য) দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে এমন খাবার খাওয়ানো উচিত। চিকিৎসকেরা বলছেন, সাধারণত মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব পুরুষের চেয়ে কম থাকে। এ কারণে ৫০ পেরোনোর পর (ম্যানুপজের পর) বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ মহিলা অস্টিওপরেসিসে আক্রান্ত হন। মহিলাদের মধ্যে অস্টিওপরেসিস বেশি দেখা যায় কারণ মহিলারা পুরুষের চেয়ে বেশি বেঁচে থাকেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, তরুণ বয়সে অস্টিওপরেসিস হয়েছে এমন ঘটনা খুবই বিরল।
অস্টিওপরেসিস প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। কিন্তু একটু বেশি হলে অথবা ফ্র্যাকচার হয়ে গেলে ব্যাক পেইন হয়ে থাকে, প্রত্যাশার চেয়ে অনেক আগে হাড়ে ফ্র্যাকচার দেখা দেয়। শরীরে অনেক বেশি থাইরয়েড হরমোন থাকলে অস্টিওপরেসিস দেখা দেয়। যৌন হরমোন লেভেলও কম থাকলে এ সমস্যাটা হতে পারে। হাড়ের অভ্যন্তরে ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য পরিমিত ফল ও শাকসবজি খাওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন চিকিৎসকেরা। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন প্রোটিন গ্রহণ করা হলে বয়সকালে অস্টিওপরেসিসের ঝুঁকি কমে যায়। এ ছাড়া অর্থোপেডিক চিকিৎসকেরা ধূমপান করতে নিষেধ করেছেন। তারা বলছেন, ধূমপান হাড়কে ভঙ্গুর করে ফেলে। তারুণ্যে যারা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণ করেছে বৃদ্ধ বয়সে তাদের অস্টিওপরেসিসের আশঙ্কা কম থাকে এবং হাড় ভঙ্গের কারণও ঘটে না।
গবেষণা অনুযায়ী, বোন মিনারেল ডেনসিটি-বিএমডি (হাড়ের অভ্যন্তরে খনিজ পদার্থের ঘনত্ব) কম থাকায় অস্টিওপরেসিসের মতো রোগটি হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ বৃদ্ধি করা হলে সমস্যাটি থেকে মুক্তি মেলে।
আমেরিকান জার্নালে বলা হয়েছে, অস্টিওপরেসিসের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৮৯ লাখ মানুষের হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে অস্টিওপরেসিসের কারণে যত ফ্র্যাকচার হবে এর ৫০ শতাংশ হবে এশিয়ানদের মধ্যে। এশিয়ার দেশগুলোতে এ রোগটি যেমন ডায়গনোসিসের বাইরে থাকে আবার ডায়গনোসিস হলেও চিকিৎসা করা হয় না দারিদ্র্যের কারণে। গবেষণা অনুযায়ী, এ সমস্যাটা শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। এশিয়ার সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন (৬০ শতাংশ), ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষ হিপ ফ্র্যাকচারে ভুগলেও তারা আধুনিক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরিবর্তে হাতুড়ে চিকিৎসা বেশি নিয়ে থাকেন। হাতুড়ে চিকিৎসকদের কাছে গেলে অর্থ খরচ কম হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও ওয়ার্ল্ড ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও) সুপারিশ অনুসারে, একজন বয়স্ক মানুষকে দৈনিক ১০০০ থেকে ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু এশিয়ান গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ দৈনিক মাত্র ৪৫০ মিলিগ্রামের কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এত অল্প পরিমাণ ক্যালসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা দিতে পারে না।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের মানুষের মধ্যে অস্টিওপরেসিস মোটেও কম নয়। যুক্তরাষ্ট্রে পঞ্চাশ-ঊর্ধ্ব বয়সী পুরুষ ও মহিলার মধ্যে চার কোটি ৪০ লাখ অস্টিওপরেসিসে ভুগছে। অন্য দিকে জাপানের মতো উন্নত দেশে ৫০ থেকে ৭৯ বছরের পুরুষ ও মহিলার মধ্যে ৩৫ শতাংশের স্পাইন ও ৯.৫ শতাংশের হিপ অস্টিওপরেসিসের সমস্যা রয়েছে।
শিশুকালে ও তরুণ বয়সে শারীরিক ব্যায়াম করলে হাড় শক্ত হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, দিনের নির্দিষ্ট সময় অবসরে থাকা, খেলাধুলার অনুশীলন করা এবং দিনের কয়েক ঘণ্টা বসে কাটালে হিপ ফ্র্যাকচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শারীরিক ফিটনেস ও অঙ্গ চালনা অস্টিওপরেসিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়