বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ১১ ১৪৩১ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০১৯
সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সংস্থা। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রধান ঢাল। দেশমাতৃকার সেবার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত আছেন শত সহস্র সূর্যসন্তান, যারা দেশের যেকোনো সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের কল্যাণে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কুন্ঠাবোধ করেননা। সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত অসংখ্য সেনাকর্মকর্তার মাঝে কেউ কেউ থাকেন যারা পেশাগত দায়িত্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে নিজ কর্মদক্ষতা, নিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও সততার সহিত দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে হয়ে উঠেন অনন্য। তেমনই একজন সেনাকর্মকর্তা হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। একজন চৌকষ ও বুদ্ধিদীপ্ত সেনাকর্মকর্তা হিসেবে জেনারেল আজিজ আহমেদের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। কর্মজীবনে এখন পর্যন্ত তিনি সেনাবাহিনীর যে দায়িত্বেই ছিলেন সেখানেই তিনি তার কর্মদক্ষতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ছাপ রেখেছেন। জেনারেল আজিজ আহমেদ কর্মদক্ষতা, বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব গুণাবলীর পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসীন হয়েছেন। গত বছরের ২৬ জুন জেনারেল পদে পদোন্নতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। ১৯৬১ সালে চাঁদপুর জেলার মতলবের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার পিতা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মরহুম আব্দুল ওয়াদুদ আহমেদ। মাতা-রেনুজা বেগম। আজিজ আহমেদ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএ (পাস), ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার অব ডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস), ২০০৮ সালে এমএসসি (টেকনিক্যাল) এবং ২০০৮ সালে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) সম্পন্ন করেন। আজিজ আহমেদ ৮ম বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের (৮ম বি এম এ লং কোর্স) ক্যাডেট হিসেবে ১৯৮৩ সালে তারিখে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন। সামরিক জীবনের শুরুতেই তিনি তার বেসিক কোর্সে প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অন্যতম মেধাবী ও চৌকষ সেনাকর্মকর্তা হওয়ার বার্তা দেন। বেসিক কোর্সে ভালো ফলাফল অর্জনের কারণে তাকে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সার্জেন্সী অপারেশনে নিয়োজিত আর্টিলারি ব্রিগেডের জিএসও-৩ (অপারেশন) দায়িত্বে নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীতে জেনারেল আজিজ আহমেদ কর্তৃক সম্পন্ন করা সকল কোর্সেই উচ্চমানের ফলাফল অর্জন করেন। এই কোর্স সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্কুল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (এস এম আই) তে অনুষ্ঠিত বেসিক ইন্টেলিজেন্স কোর্স এবং মিলিটারি সাইন্স কোর্স। বেসিক ইন্টেলিজেন্স কোর্সে এবং মিলিটারি সাইন্স কোর্সে তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জেনারেল আজিজ ১৯৮৯-১৯৯০ সালে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল, হালিশহর, চট্টগ্রাম হতে অফিসার্স গানারী স্টাফ কোর্স করার পর তাঁকে ১৯৯২-১৯৯৩ সালে ভারতের স্কুল অফ আর্টিলারি, দেওলালীতে প্রেরণ করা হয় ‘লং গানারী স্টাফ কোর্স (ফিল্ড)’ করার জন্যে। উক্ত কোর্সে তিনি অসাধারণ ফলাফল অর্জন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও দেশের ভাবমূর্তি বিদেশের মাটিতে উজ্জ্বল করেন। অতঃপর তিনি মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ থেকে ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে সাফল্যের সঙ্গে আর্মি ষ্টাফ কোর্স-১৯ সম্পন্ন করেন। জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন চৌকস অফিসার যিনি আর্টিলারি অফিসার্স বেসিক কোর্সসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোর্সে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্টিলারি ব্রিগেডের জিএসও-৩ (অপারেশন), একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর (বিএম), সেনাসদর প্রশিক্ষণ পরিদফতরের গ্রেড-২ স্টাফ এবং সেনাসদর, বেতন ও ভাতা পরিদফতরের গ্রেড-১ স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে এবং স্কুল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (এসএমআই)-এ প্রশিক্ষক হিসেবে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেন। জেনারেল আজিজ তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে একটি আর্টিলারি ইউনিটের অধিনায়ক, একটি বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, একটি বিজিবি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডসহ দুটি আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার এবং একটি পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে কমান্ড সম্পন্ন করেছেন। তিনি মহাপরিচালক বিজিবি ছাড়াও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং আর্টডক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। বিজিবির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বিজিবি দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার মধ্যে আধুনিক ও শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আজিজ আহমদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই বাহিনী বর্ডারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মাদকপাচার, চোরাচালানী ইত্যাদি প্রতিরোধ করে দেশের অর্থনীতিকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবদান রেখেছে। বিজিবি’র মহাপরিচালক হিসেবে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে তাঁকে বিজিবিএম, পিবিজিএম এবং বিজিবিএমএস এই তিনটি পদকে ভূষিত করা হয়েছে। এছাড়া জেনারেল আজিজ আহমেদ তাঁর কর্মজীবনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে ১৯৯৫-১৯৯৬ সালে ইরাক-কুয়েতে সামরিক পর্যবেক্ষক এবং ২০০৫-২০০৬ সালে সুদানে জাতিসংঘ মিশনে ফোর্স কমান্ডারের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। গত বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে মনোযোগ দেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহ জেনারেল আজিজ আহমেদের তত্বাবধানে সফলতার সাথে মোকাবিলা করে যাচ্ছে। জেনারেল আজিজ আহমেদের চৌকষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে এবং এর মাধ্যমে জেনারেল আজিজ আহমেদ বাংলাদেশের অন্যতম সফল ও দক্ষ সেনাপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়