শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ বৈশাখ ৬ ১৪৩১ ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
আজ ১৩ সেপ্টেম্বর। আজকের এই দিনে সাপাহারকে শত্রু মুক্ত করতে গিয়ে এলাকার স্বাধীনতাকামী বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। তাই প্রতি বছর দিনটি ফিরে আসলে সাপাহারের অনেক সন্তান হারা স্বজনরা অঝোরে তাদের চোখের জল ফেলেন এবং বিভৎস দিনের কথা মনে করে ডুকরে শিঁউরে ওঠেন।
সাপাহার উপজেলার কয়েকজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হলে দেশের অন্যান্য এলাকার মত তৎকালীন স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকারদের সহযোগীতায় সাপাহার উপজেলাও পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায়। সেইসাথে সাপাহারে বসেই তারা পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
সেসময় যুদ্ধের প্রায় ৬মাস অতিবাহিত হলে সেপ্টেম্বর মাসে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মত অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার সাপাহারবাসীকে মুক্ত করতে সাপাহার উপজেলার ও পার্শ্ববর্তী মহাদেবপুর উপজেলার ৮০জন মুক্তিযোদ্ধার একটি সংগঠিত দল সাপাহারের শক্তিশালী তৎকালীন পাকিস্তানি মিলিটারী বাহিনী লে. শওকত আলীল ওই সু-সজ্জিত ঘাঁটিটি চিরতরে উৎখাত করে সাপাহারবাসীকে নরপিচাশদের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য গোপনে এক বৈঠক করে দৃঢ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় তারা।
শেষে সময় ও সুযোগ বুঝে আজকের এই দিনে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধার সজ্জিত দলটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে শত্রু সেনার ঘাঁটির অদুরে একটি ধান ক্ষেতে ওঁত পাতে। ঠিক এসময় দেশের রাজাকার আলবদর মারফত মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের সংবাদ পৌঁছে যায় শত্রু শিবিরে তাৎক্ষনিক তারাও যুদ্ধের প্রস্ততি গ্রহন করে।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষে ভোর রাতে আক্রমন চালায় ধান ক্ষেতে অবস্থান নেয়া দলটি,শত্রু সেনারাও পাল্টা আক্রমন চালাতে শুরু করে। ঘণ্টাকালব্যাপী এক টানা যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধার দলটি যখন পাক সেনাদের প্রায় কোন ঠাসা করে ফেলেছিল ঠিক তখনই পতœীতলা উপজেলা সদর ও মধইল বাজার এলাকা থেকে অসংখ্য পাক সেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে সাপাহারে প্রবেশ করে।
নতুন শত্রু সেনার অনুপ্রবেশে শত্রুবাহিনীর শক্তি দ্বিগুন হারে বেড়ে যায় এবং তারা এক সময় স্বল্পসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার দলটিকে ধরাশায়ী করে ফেলে । এসময় শত্রু সেনার গুলির আঘাতে যুদ্ধের মাঠেই শাহদাৎ বরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান, আইয়ুব আলী, আব্দুল হামিদ সহ ১৫জন। আহত হন মুক্তিযোদ্ধা মনছুর আলী, এস এম জাহিদুল ইসলাম, দলনেতা আহম্মদ উল্লাহ, সোহরাব হোসেন, নুরুল ইসলাম সহ অনেকে।
এছাড়া শত্রুদের হাতে জীবিত ধরা পড়েন ৮জন। এসময় শত্রু সেনারা যুদ্ধের মাঠ থেকে সাপাহারের তিলনা গ্রামের আবু ওয়াহেদ গেটের, মহাদেবপুর উপজেলার এসএম জাহিদুল ইসলাম সহ ৮জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে মধইল স্কুলের ছাদে তুলে ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে লাথি মেরে লাশ ছাদ থেকে মাটিতে ফেলে দেয়। অপর ২জনকে মহাদেবপুর এনে একটি কুপে ফেলে দিয়ে জীবন্ত কবর দেয় আর দুজনকে নাটোর জেলাসদরে ধরে এনে তৎকালিন তাদের তৈরিকৃত রাজবাড়ীর জেলখানায় বন্দী করে রাখে। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া এস এম জাহিদুল ইসলাম ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে প্রতি বেদকের সামনে হাউ, মাউ করে কেঁদে ফেলেন ও ঘটনার বর্ননা দেন।
তাই আজকের এই দিনে সাপাহারে অনেকে দিনটির কথা স্মরণ করে অঝোরে তাদের চোখের পানি ফেলেন ও ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। উল্লেখ্য যে, প্রতিবছর দিনটি ঘুরে এলেও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দিনটি স্মরণে কোন স্মরণসভা কিংবা দিবসটি উদযাপন করা না হলেও সাপাহারের সাংবাদিকগন তাদের স্ব-স্ব পত্রিকায় দিনটি স্মরণে দিবসটির বর্ননা লিখে ঘটনাবলীর স্মরণ করে থাকেন।
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়