মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ৫ ১৪৩০ ০৯ রমজান ১৪৪৫
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০১৯
কুখ্যাত হওয়ার পথে থাকা এক অখ্যাত ক্রিকেটারই ম্যাচের ভাগ্যলিপি লিখে বিখ্যাত হয়ে গেলেন।
আগের দিন সন্ধ্যা থেকেই টি-টোয়েন্টির রঙিন দুনিয়ায় অভিষেকের মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল তাঁকে। অথচ এবার নেট বোলার হিসেবে ঢাকা ডায়নামাইটসের ত্রিসীমানায় ঘেঁষার সময়ও জানতেন না যে হুট করেই বড় মঞ্চে নামার সুযোগ মিলে যাবে, জীবনে এই প্রথমবার স্টেডিয়ামে খেলতে নামবেন!
সেই উত্তেজনাতেই কিনা এমন গোলমাল করে ফেললেন যে রীতিমতো ছি ছি পড়ে যাওয়ার দশা। ঢাকা ডায়নামাইটসের ৯ উইকেটে তোলা ১৮৩ রান তাড়া করতে নামা রংপুর রাইডার্সকে জয়ের কক্ষপথ দেখিয়ে দেওয়া ব্যর্থতা তাঁকেও প্রবল হতাশায় নিমজ্জিত করছিল নিশ্চিতভাবেই। অফস্পিনার শুভাগত হোমের করা ইনিংসের অষ্টম ওভারে এক বলের ব্যবধানে দুইবার ক্যাচ ফেললেন ১৮ ও ১৯ রানে থাকা মোহাম্মদ মিঠুনের। শর্ট ফাইন লেগে এমন দুটো ক্যাচ ফেললেন, যার চেয়ে সহজ কিছু হতেই পারে না।
অচেনা বলে ম্যাচ চলাকালীন তাঁর নামটিও ঠিকঠাকভাবে বলার মতো লোক ছিল না। ম্যাচের পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম জিজ্ঞাসাও তাই ছিল এটিই। তিনি জানালেন তাঁর নাম আলিস আল ইসলাম। ততক্ষণে অবশ্য খলনায়ক হওয়ার কঠিন বাস্তবতার মুখ থেকে ফিরে ঢাকার ম্যাচ জয়ের নায়কও বনে গেছেন এই অফস্পিনার। সহজ জয়ের তীর দেখতে পাওয়া রংপুর রাইডার্সকে থামিয়েছেন টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই করা হ্যাটট্রিকে। এমনকি জেতার জন্য বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের শেষ ওভারে ১৪ রানের প্রয়োজনীয়তা যখন, তখনও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফল।
ব্যর্থতার অতল থেকে তাঁর চূড়া ছোঁয়া সাফল্যেই গতবারের ফাইনালে হারের জ্বালা ২ রানের জয়ে কিছুটা হলেও জুড়াতে পারল ঢাকা ডায়নামাইটস। যে জয়ে আলিসের ২৬ রানে ৪ উইকেট নেওয়া পারফরম্যান্স যেন জীবনের উত্থান-পতনের এক সার্থক জলছবিও। ইনিংসের সপ্তম ওভারে প্রথম বল করতে এসে দেন মাত্র ৭ রান। ‘মাত্র’ই কারণ সুনীল নারিনের করা এর আগের ওভার থেকেই যে উঠেছিল ২২ রান। দুই ছক্কা ও এক বাউন্ডারিসহ যার ২১ রানই রাইলি রুশোর ব্যাটে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ক্যারিবীয় স্পিনারের দ্বিতীয় সবচেয়ে ব্যয়বহুল ওভারের পরই ঢাকার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আক্রমণে নিয়ে আসেন আলিসকে।
দুই ক্যাচ ফেলার দুর্ঘটনা এর পরের ওভারেই। হতাশায় মুষড়ে পড়া আলিসকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে আবার ফিরিয়ে আনতে আনতে পেরিয়ে গেছে আরো ৭ ওভার। যখন আবার আক্রমণে ফিরেছেন, ততক্ষণে জয় থেকে খুব দূরে নয় রংপুর রাইডার্সও। রুশো (৪৪ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৮৩) ও আলিসের হাতে দুইবার জীবন পাওয়া মিঠুন ১২১ রানের তৃতীয় উইকেট পার্টনারশিপে ম্যাচ বেরই করে ফেলেছিলেন একরকম। কিন্তু ১৬তম ওভারে আক্রমণে ফিরেই তৃতীয় বলে রুশোকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলা আলিস তাঁর পরের ওভারে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়েও দেন।
মাঝখানে সাকিব আল হাসান রবি বোপারাকে তুলে নেওয়ার পর নিজের তৃতীয় ওভারটিই আলিসকে খাদের কিনার থেকে তুলে আনে আরো। ওভারের চতুর্থ বলে মিঠুনকে (৩৫ বলে ৪৯) বোল্ড করেন। পরের বলে মাশরাফি বিন মর্তুজাও তাই। শেষ বলে ফরহাদ রেজাকেও অধিনায়ক সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে হ্যাটট্রিকের অনির্বচনীয় অনুভূতিতেও ভেসে যান আলিস। অখ্যাত এই ক্রিকেটারের রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার গল্পে তবু বিতর্কের গন্ধ লেগে থাকছে।
কারণ বিপিএলের নিয়মানুযায়ী ড্রাফটের বাইরে থেকে খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই। তবু নিয়ম বদলে তাঁকে দলভুক্ত করা হয়েছে। অন্য দলগুলোর জন্যও একই সুযোগ উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এটি নিয়ে প্রশ্ন তাই আর এখন অত উচ্চকিত নয়। তাই বলে আলিসের বোলিং অ্যাকশনও অত সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে না। এই অফস্পিনারের অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে রংপুর রাইডার্স আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও দিয়েছে কাল রাতে। বিশেষ করে তাঁর ‘দুসরা’ সন্দেহমুক্ত নয় বলেই মত বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
সেই সন্দেহের ঘেরাটোপে বন্দি হওয়ার আগেই কুখ্যাত হতে থাকা অখ্যাত আলিস খ্যাতির চৌকাঠও ডিঙিয়েছেন!
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়