শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ চৈত্র ১৫ ১৪৩০ ১৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক নৃত্য কাউন্সিলের সদস্য পদ পেয়েছেন মোরশেদা বেগম শিল্পী।
নওগাঁর নৃত্যশিল্পী মোরশেদা বেগম শিল্পী। মফস্বল শহরে বসে জীবনভর নৃত্য চর্চা করে অসামান্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। বাংলাদেশের ঢাকার স্বনামধন্য অনেক নৃত্য সংগঠনকে সরিয়ে স্থান অর্জন করেছেন ইউনেসকোর আন্তর্জাতিক নৃত্য কাউন্সিলের সদস্য পদ। একই সঙ্গে তার নৃত্য সংগঠন নৃত্য নিকেতন, নওগাঁও পেয়েছে এই স্বীকৃতি।
তিনি নওগাঁ ডিসি অফিসে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করে গত দুই দশক ধরে গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক মানের একটি নাচের দল! সেই নাচের দল নওগাঁর গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা দেশের নানা প্রান্তে নৃত্য পরিবেশন করে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছেন। নওগাঁ শহরে যে কটি নাচের দল গড়ে উঠেছে তার প্রায় সব সদস্যই তার হাত দিয়েই গড়া। যার প্রতিভার বিভা পৌঁছে গেছে ইউনেসকোতেও।
নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য নিকেতনের সভাপতি মোরশেদা বেগম শিল্পী বলেন, ‘আগস্ট মাসের সাত তারিখে প্রথম ইউনেসকোর সদর দপ্তর থেকে যোগাযোগ করা হয়। আমরা কোনোরকম যোগাযোগ করিনি কিংবা কোন ধরনের আবেদনের বিষয় ছিল না। তারা প্রথমে আমাদের ফেসবুকে পেইজে যোগাযোগ করে। ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের অ্যালকিস রাফটিস সরাসরি যোগাযোগ করেন।
তিনি জানান, আমাদের যদি বিদেশে নাচ পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তাহলে আমার যাব কি না? আমরা যেতে রাজি হলে তিনি আমাদের সংগঠনের এবং আমার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। সেসব পাঠানোর পর তারা ফোনে যোগাযোগ করেন। এ সময় আমাকে জানানো হয় আমাদের কাজের পরিধি জেনে তারা খুশি।
এরপর ৩০ আগস্ট ২০১৯ সন্ধ্যা সাতটায় তারা আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, আমি মোরশেদা বেগম শিল্পী এবং আমার সংগঠন নৃত্য নিকেতন, নওগাঁ’কে এই আন্তর্জাতিক ড্যান্স কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। আমি এবং আমার দল আলাদা সদস্য পদ লাভ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ড্যান্স কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে গিয়ে যখন নিজের আর আমার দলের নাম দেখলাম তখন কী যে আনন্দ পেলাম। এত আনন্দ মনে হয় জীবনে পাইনি।’
একই সময়ে বাংলাদেশের আরও দুজন এ সদস্য পদ লাভ করেছে তারা হলেন ঢাকার তুরঙ্গমী স্কুল অফ ড্যান্স এর পূজা সেনগুপ্তা ও ধানমন্ডির বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা সোনালিকা সরকার।
নাচের দল গড়ে তোলার বিষয়ে শিল্পী বলেন, ‘১৯৯৭ সালে গড়ে তুলি নৃত্য নিকেতন। প্রথমে ছিল নাচ শেখানোর বিদ্যালয়। পরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাছাই করা ছেলেমেয়েদের নিয়ে গড়ি এই নাচের দল। এরপর থেকে হলো কি বিভাগীয় জাতীয় প্রতিটি নৃত্য প্রতিযোগিতায় নওগাঁর নৃত্যশিল্পীরা পুরস্কার পেতে লাগল। এর ফাঁকে ফাঁকে আমি নিজের প্রস্তুতিও নিতে থাকি। দেশের সেরা নৃত্যশিল্পীদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। সাজু আহমেদ, দীপা খন্দকার, বেলায়েত হোসেন খান, শিবলী মোহাম্মদ। তাদের কাছে শিখেছি কিন্তু কখনোই ঢাকামুখী সংগঠন গড়তে চাইনি। নওগাঁ শহরকে নিজের ঘাঁটি রেখে সারা দেশে নৃত্য প্রতিযোগিতা ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আমরা যখন স্টেজে নৃত্য পরিবেশন করি সবাই খুব অবাক হয়।
কেননা, মফস্বলের দল হিসেবে সবাই প্রথমে কিছুটা অবহেলার দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু আমি ও আমার দলের ছেলেমেয়েরা তাদের পরিবেশনা দিয়ে মানুষের সম্মান জিতে এনেছি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্মানও অর্জন করলাম। আমরা এই মফস্বল শহরে বসে ব্যয়বহুল চিত্রাঙ্গদা এবং শ্যামা নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেছি। এরপর একে একে বৃক্ষরোপণ উৎসাহিত করতে নৃত্যনাট্য নির্মাণ করি। সেটাও পরিবেশন করি আমরা নিয়মিতভাবেই। আরও রয়েছে প্রকৃতি, সামাজিক বনায়ন, বর্ষা প্রভৃতি নৃত্যনাট্য।’
naogaondorpon.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়